পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হওয়া 98● তবে কি ব্রহ্মেতে আমাতে তফাত নেই ? মস্ত তফাত আছে । তিনি ব্রহ্ম হয়েই আছেন, আমাকে ব্ৰহ্ম হতে হচ্ছে । তিনি হয়ে রয়েছেন, আমি হয়ে উঠছি— আমাদের দুজনের মধ্যে এই লীলা চলছে। হয়ে থাকার সঙ্গে হয়ে ওঠার নিয়ত মিলনেই আনন্দ । নদী কেবলই বলছে, “আমি সমুদ্র হব।’ সে তার স্পর্ধ নয়— সে যে সত্য কথা, স্বতরাং সেই তার বিনয় । তাই সে সমুদ্রের সঙ্গে মিলিত হয়ে ক্রমাগতই সমুদ্র হয়ে যাচ্ছে— তার আর সমুদ্র হওয়া শেষ হল না। বস্তুত, চরমে সমুদ্র হতে থাকা ছাড়া তার আর গতিই নেই। তার দুই দীর্ঘ উপকূলে কত খেত, কত শহর, কত গ্রাম, কত বন আছে তার ঠিক নেই। নদী তাদের তুষ্ট করতে পারে, পুষ্ট করতে পারে, কিন্তু তাদের সঙ্গে মিলে যেতে পারে না। এই-সমস্ত শহর গ্রাম বনের সঙ্গে তার কেবল আংশিক সম্পর্ক। নদী হাজার ইচ্ছা করলেও শহর গ্রাম বন হয়ে উঠতে পারে না। সে কেবল সমুদ্রই হতে পারে। তার ছোটো সচল জল সেই বড়ো অচল জলের একই জাত। এইজন্যে তার সমস্ত উপকূল পার হয়ে বিশ্বের মধ্যে সে কেবল ওই বড়ো জলের সঙ্গেই এক হতে পারে। সে সমূদ্র হতে পারে, কিন্তু সে সমুদ্রকে পেতে পারে না। সমুদ্রকে ংগ্রহ করে এনে নিজের কোনো বিশেষ প্রয়োজনে তাকে কোনো বিশেষ গুহাগহবরে লুকিয়ে রাখতে পারে না। যদি কোনো ছোটো জলকে দেখিয়ে সে মূঢ়ের মতো বলে ‘ই, সমুদ্রকে এইখানে আমি নিজের সম্পত্তি করে রেখেছি’ তাকে উত্তর দেব, ‘ও তোমার সম্পত্তি হতে পারে, কিন্তু ও তোমার সমুদ্র নয়। তোমার চিরন্তন জলধারা এই জলাটাকে চায় না, সে সমুদ্রকেই চায়। কেননা, সে সমুদ্র হতে চাচ্ছে, সে সমূদ্রকে পেতে চাচ্ছে না।’ আমরাও কেবল ব্ৰহ্মই হতে পারি, আর-কিছুই হতে পারি নে।