পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রেম
২৫

জানা হয়—এর সঙ্গে আমাদের হৃদয়ের যোগ কোথায়? এই সত্যের কি কোনো রসই নেই?

 তা বললে চলবে কী করে? সমস্ত সত্য যেমন তাঁতে মিলেছে তেমনি সমস্ত রসও যে তাঁতে মিলে গেছে। সেইজন্যে উপনিষৎ তাঁকে শুধু সত্য বলেন নি, তাঁকে রসস্বরূপ বলেছেন— তাঁকে সেই পরিপূর্ণ রসরূপে জানলে জানার সার্থকতা হয়।

 তা হলে দাঁড়ায় এই, যিনি চরম সত্য তিনিই পরম রস। অর্থাৎ তিনি প্রেমস্বরূপ। নইলে তাঁর মধ্যে কিছুরই সমাধান হতে পারতই না; ভেদ ভেদই থাকত, বিরোধ কেবলই আঘাত করত এবং মৃত্যু কেবলই হরণ করে নিত। তাঁর মধ্যে যে সমস্তই মেলে, সেটা একটা জ্ঞানতত্ত্বের মিলন নয়- তাঁর মধ্যে একটি প্রেমতত্ত্ব আছে— সেইজন্য সমস্তকে মিলতেই হয়, সেইজন্যই বিচ্ছেদ বিরোধ কখনোই চিরন্তন সত্য বস্তু হয়ে উঠতে পারে না।

 ইচ্ছার শেষ চরিতার্থতা প্রেমে। প্রেমে— কেন, কী হবে, এ-সমস্ত প্রশ্ন থাকতেই পারে না। প্রেম আপনিই আপনার জবাবদিহি, আপনিই আপনার লক্ষ্য।

 যদি বল ত্যাগের দ্বারা ত্যক্তবস্তু থেকে মুক্তিলাভ করবে, তাতে আমাদের মন সায় দেয় না। যদি বল ত্যাগের দ্বারা ত্যক্তবস্তুকে পূর্ণতররূপে লাভ করবে তা হলেও আমাদের মনের সম্পূর্ণরূপে সাড়া পাওয়া যায় না। যদি বল ত্যাগের দ্বারা প্রেমকে পাওয়া যাবে তা হলে মন আর কথাটি কইতে পারে না— এ কথাটাকে যদি সে ঠিকমত অবধান ক’রে শোনে তবে তাকে বলে উঠতেই হবে ‘তা হলে যে বাঁচি’।

 ত্যাগের সঙ্গে প্রেমের ভারী একটা সম্বন্ধ আছে— এমন সম্বন্ধ যে, কে আগে কে পরে তা ঠিক করাই দায়। প্রম ছাড়া ত্যাগ হয় না, আবার ত্যাগ ছাড়া প্রেম হতে পারে না। যা আমাদের কাছ থেকে