পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

A9\98 শাস্তিনিকেতন পরমাত্মার সঙ্গে তাদের অব্যবহিত চেতনাময় যোগের ব্যবধান একদিন ক্ষীণ হয়ে দূর হয়ে যাবে— সেই শুভক্ষণের জন্যে তারা প্রতিদিন পূর্ণতর আশার সঙ্গে প্রতীক্ষা করে আছে। তারা দুঃখকে অপমানকে আঘাতকে উদার শক্তির সঙ্গে বহন করবার জন্যে দিনে দিনে প্রস্তুত হচ্ছে এবং যে জ্যোতির্ময় পরমানন্দধারা বিশ্বের দুই কুলকে উদবেল করে দিয়ে নিরস্তর ধারায় দিগদিগন্তরে ঝরে পড়ে যাচ্ছে, জীবনকে তারই কাছে নত করে ধরবার জন্যে তারা একটি আহবান শুনতে পাচ্ছে । এই তপোবনটির মধ্যে একটি নিগৃঢ় রহস্যময় স্বষ্টির কাজ চলছে, সেই রহস্যটি আমাদের মধ্যে কে দেখতে পাচ্ছে ! যে-একটি জীবন দেহের আবরণ আজ ঘুচিয়ে দিয়ে পরমপ্রাণের পদপ্রান্তে আপনাকে সম্পূর্ণ সমর্পণ করে দিয়েছে, সেই জীবনের ভাষামুক্ত স্বরমুক্ত অতি বিশুদ্ধ আনন্দ এখানকার নিস্তব্ধ আকাশের মধ্যে নির্মল ভক্তিরসে সরস একটি পবিত্র বাণীকে কেবলই বিকীর্ণ করছে, কেবলই বলছে ‘তিনি আমার প্রাণের আরাম, আত্মার শান্তি, মনের আনন্দ’— সে বলা আর শেষ হচ্ছে না। সেই আনন্দের কাজ আর ফুরালো না । জগতে একমাত্র আনন্দই যে স্বষ্টি করে, স্বষ্টির শক্তি তো আর কিছুরই নেই। এখানকার আকাশপ্লবী অবারিত আলোকের মাঝখানে বসে আনন্দের সঙ্গে তার যে আনন্দ মিলেছিল সেই আনন্দ সেই আনন্দসন্মিলন তো শুন্যতার মধ্যে বিলীন হতে পারে না। সেই আনন্দই আজও স্বষ্টি করছে, এই আশ্রমকে স্বষ্টি করে তুলেছে, . এখানকার গাছপালার শু্যামলতার উপরে একটি প্রগাঢ় শাস্তির স্বস্নিগ্ধ অঞ্জন প্রতিদিন যেন নিবিড় করে মাখিয়ে দিচ্ছে। অনেক দিনের অনেক স্বগভীর আনন্দমুহূর্ত এখানকার স্বর্যোদয়কে স্বর্যাস্তকে এবং নিশীথরাত্রের নীরব নক্ষত্ৰলোককে দেবর্ষি নারদের বীণার তারগুলির মতো অনির্বচনীয় ভক্তির স্বরে আজও কম্পিত করে তুলছে। সেই