পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন وك و&429 করছে না ? নিশ্চয়ই করছে। কেননা, এইখানেই ষে একদিন সকলের চেয়ে বড়ো রহস্তনিকেতনের একটি দ্বার খুলে গিয়েছে। এখানে গাছের তলায় প্রেমের সঙ্গে প্রেম মিলেছে, দুই আনন্দ এক হয়েছে। সেই ‘এযঃ অস্ত পরম আনন্দঃ, যে ইনি ইহার পরমানন্দ, সেই ইনি এবং এ কতদিন এইখানে মিলেছে— হঠাৎ কত উষার আলোয়, কত দিনের অবসান-বেলায়, কত নিশীথরাত্রের নিস্তব্ধ প্রহরে— প্রেমের সঙ্গে প্রেম, আনন্দের সঙ্গে আনন্দ ! সেদিন যে দ্বার খোলা হয়েছে সেই দ্বারের সমুখে এসে আমরা দাড়িয়েছি, কিছুই কি শুনতে পাব না? কাউকে কি দেখা যাবে না ? সেই মুক্ত দ্বারের সামনে আজ আমাদের উৎসবের মেলা বসেছে, ভিতর থেকে কি একটি আনন্দগান বাহির হয়ে এসে আমাদের এই সমস্ত দিনের কলরবকে স্বধাসিক্ত করে তুলবে না ? না, তা কখনোই হতে পারে না। বিমুখ চিত্তও ফিরবে, পাষাণ হৃদয়ও গলবে, শুষ্ক শাখাতেও ফুল ফুটে উঠবে। হে শাস্তিনিকেতনের অধিদেবতা, পৃথিবীতে যেখানেই মানুষের চিত্ত বাধামুক্ত পরিপূর্ণ প্রেমের স্বারা তোমাকে স্পর্শ করেছে সেখানেই অমৃতবর্ষণে একটি আশ্চর্য শক্তি সঞ্জাত হয়েছে। সে শক্তি কিছুতেই নষ্ট হয় না, সে শক্তি চারি দিকের গাছপালাকেও জড়িয়ে ওঠে, চারি দিকের বাতাসকে পূর্ণ করে। কিন্তু তোমার এই একটি আশ্চর্য লীলা, শক্তিকে তুমি আমাদের কাছে প্রত্যক্ষ করে রেখে দিতে চাও না। তোমার পৃথিবী আমাদের একটি প্রচণ্ড টানে টেনে রেখেছে, কিন্তু তার দড়িদড়, তার টানাটানি, কিছুই চোখে পড়ে না। তোমার বাতাস আমাদের উপর যে ভার চাপিয়ে রেখেছে সেটি কম ভার নয়, কিন্তু বাতাসকে আমরা ভারী বলেই জানি নে। তোমার স্বর্যালোক নানা প্রকারে আমাদের উপর ষে শক্তিপ্রয়োগ করছে যদি গণনা করতে যাই তার পরিমাণ দেখে আমরা স্তম্ভিত হয়ে মাই, কিন্তু তাকে আমরা জালো বলেই জানি, শক্তি বলে জানি নে ।