পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\©ዓ8 শাস্তিনিকেতন অংশ পায় এবং নিঃসংকোচে কুটিরের দ্বার রোধ করে পড়ে থাকে। মুনিকস্তার গাছে জল দিচ্ছেন এবং আলবাল যেমনি জলে ভরে উঠছে অমনি তারা সরে যাচ্ছেন ; পাখিরা নিঃশঙ্কমনে আলবালের জল খেতে আসে এই তাদের অভিপ্রায়। রৌদ্র পড়ে এসেছে, নীবার ধান্ত কুটিরের প্রাঙ্গণে রাশীকৃত, এবং সেখানে হরিণরা শুয়ে রোমন্থন করছে । আহুতির স্বগন্ধ ধূম বাতাসে প্রবাহিত হয়ে এসে আশ্রমোন্মুখ অতিথিদের সর্বশরীর পবিত্র করে দিচ্ছে । ή 3 তরুলত পশুপক্ষী সকলের সঙ্গে মাহুষের মিলনের পূর্ণতা, এই হচ্ছে এর ভিতরকার ভাব । সমস্ত অভিজ্ঞানশকুন্তল নাটকের মধ্যে ভোগলালসানিষ্ঠুর রাজপ্রাসাদকে ধিক্কার দিয়ে যে-একটি তপোবন বিরাজ করছে তারও মূল স্বরটি হচ্ছে ওই, চেতন অচেতন সকলেরই সঙ্গে মানুষের আত্মীয়-সম্বন্ধের পবিত্র মাধুর্য। কাদম্বরীতে তপোবনের বর্ণনায় কবি লিখছেন– সেখানে বাতাসে লতাগুলি মাথা নত করে প্রণাম করছে, গাছগুলি ফুল ছড়িয়ে পূজা করছে, কুটিরের অঙ্গনে শুামাক ধান শুকোবার জন্যে মেলে দেওয়া আছে, সেখানে আমলক লবলী লবঙ্গ কদলী বদরী প্রভৃতি ফল সংগ্ৰহ করা হয়েছে, বটুদের অধ্যয়নে বনভূমি মুখরিত, বাচাল শুকের অবিরত শ্রবণের দ্বারা অভ্যস্ত আহুতিমন্ত্র উচ্চারণ করছে, অরণ্য-কুকুটের বৈশ্বদেব-বলিপিগু আহার করছে, নিকটে জলাশয় থেকে কলহংসশাবকের এসে নীবারবলি খেয়ে যাচ্ছে, হরিণীর। জিহাপল্লব দিয়ে মুনিবালকদের লেহন করছে । এর ভিতরকার কথাটা হচ্ছে ওই । তরুলত জীবজন্তুর সঙ্গে মামুষের বিচ্ছেদ দূর করে তপোবন প্রকাশ পাচ্ছে— এই পুরানো কথাই আমাদের দেশে বরাবর চলে এসেছে।