পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭૧૭ শান্তিনিকেতন কিন্তু কবি নবযৌবনের এই লালসাকে প্রকৃতির বিচিত্র ও বিরাট স্বরের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়ে মুক্ত আকাশের মাঝখানে তাকে ঝংকৃত করে তুলেছেন। ধারাযন্ত্রমুখরিত নিদাঘদিনান্তের চন্দ্রকিরণ এর মধ্যে আপনার স্বত্বটুকু যোজনা করেছে, বর্ষায় নবজলসেকে ছিন্নতাপ বনাস্তে পরনচলিত কদম্বশাখ। এর ছন্দে আন্দোলিত, আপঙ্কশালিরুচির শারদলক্ষ্মী তার হংসরবনূপুরধ্বনিকে এর তালে তালে মন্দ্রিত করেছেন, এবং বসন্তের দক্ষিণবায়ুচঞ্চল কুস্থমিত আম্রশাখার কলমর্মর এরই তানে তানে विखैौजै। , বিরাট প্রকৃতির মাঝখানে যেখানে যার স্বাভাবিক স্থান সেখানে তাকে স্থাপন করে দেখলে তার অত্যুগ্রতা থাকে না, সেইখান থেকে বিচ্ছিন্ন করে এনে কেবলমাত্র মানুষের গণ্ডির মধ্যে সংকীর্ণ করে দেখলে তাকে ব্যাধির মতো অত্যন্ত উত্তপ্ত এবং রক্তবর্ণ দেখতে হয়। শেক্সপীয়রের দুই-একটি খণ্ডকাব্য আছে, নরনারীর আসক্তি তার বর্ণনীয় বিষয়। কিন্তু সেই-সকল কাব্যে আসক্তিই একেবারে একান্ত, তার চার দিকে আর-কিছুরই স্থান নেই ; আকাশ নেই, বাতাস নেই, প্রকৃতির ষে গীতগন্ধবর্ণবিচিত্র বিশাল আবরণে বিশ্বের সমস্ত লজ্জা রক্ষা করে আছে তার কোনো সম্পর্ক নেই। এইজন্তে সে-সকল কাব্যে প্রবৃত্তির উন্মত্ততা অত্যন্ত দুঃসহক্সপে প্রকাশ পাচ্ছে । কুমারসম্ভবে তৃতীয় সর্গে যেখানে মদনের আকস্মিক আবির্ভাবে যৌবনচাঞ্চল্যের উদ্দীপনা বর্ণিত হয়েছে, সেখানে কালিদাস উন্মত্ততাকে একটি সংকীর্ণ সীমার মধ্যেই সবৰ্ময় করে দেখাবার প্রয়াসমাত্র পান নি । আতশ-কাচের ভিতর দিয়ে একটি বিন্দুমাত্রে স্বৰ্যকিরণ সংহত হয়ে পড়লে সেখানে আগুন জলে ওঠে ; কিন্তু সেই সূর্যকিরণ যখন আকাশের সর্বত্র স্বভাবত ছড়িয়ে থাকে তখন সে তাপ দেয় বটে, কিন্তু দগ্ধ করে না। কালিদাস বসন্তপ্রকৃতির সর্বব্যাপী যৌবনলীলার মাঝখানে