পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তপোবন *4 পূরণ করে। মানুষ এক নয়, নিখিলকে নিয়ে সে সম্পূর্ণ, অতএব কল্যাণ যখন আবির্ভূত হয় তখন সকলের সঙ্গে যোগেই তার আবির্ভাব। রামায়ণে রামের বনবাস হল । কেবল রাক্ষসের উপদ্রব ছাড়া সে বনবাসে তাদের আর কোনো দুঃখই ছিল না। তারা বনের পর বন, নদীর পর নদী, পর্বতের পর পর্বত পার হয়ে গেছেন ; তারা পর্ণকুটীরে বাস করেছেন, মাটিতে শুয়ে রাত্রি কাটিয়েছেন ; কিন্তু তারা ক্লেশবোধ করেন নি। এই-সমস্ত নদী গিরি অরণ্যের সঙ্গে তাদের হৃদয়ের মিলন ছিল। এখানে তারা প্রবাসী নন । অন্য দেশের কবি রাম লক্ষ্মণ সীতার মাহাত্ম্যকে উজ্জল করে দেখাবার জন্যই বনবাসের দুঃখকে খুব কঠোর করেই চিত্রিত করতেন । কিন্তু বাল্মীকি একেবারেই তা করেন নি— তিনি বনের আনন্দকেই বারম্বার পুনরুক্তি-দ্বারা কীর্তন করে চলেছেন। রাজৈশ্বর্য র্যাদের অস্তঃকরণকে অভিভূত করে আছে বিশ্বপ্রকৃতির সঙ্গে মিলন কখনোই তাদের পক্ষে স্বাভাবিক হতে পারে না । সমাজগত সংস্কার ও চিরজন্মের কৃত্রিম অভ্যাস পদে পদেই তাদের বাধা না দিয়ে থাকতে পারে না । সেই-সকল বাধার ভিতর থেকে প্রকৃতিকে র্তার। কেবল প্রতিকূলই দেখতে থাকেন। আমাদের রাজপুত্ৰ ঐশ্বর্ষে পালিত কিন্তু ঐশ্বর্ষের আসক্তি র্তার অন্তঃকরণকে অভিভূত করে নি। ধর্মের অনুরোধে বনবাস স্বীকার করাই তার প্রথম প্রমাণ । তার চিত্ত স্বাধীন ছিল, শাস্ত ছিল, এই— জন্যেই তিনি অরণ্যে প্রবাসদুঃখ ভোগ করেন নি ; এইজন্যেই তরুলতা পশুপক্ষী তার হৃদয়কে কেবলই আনন্দ দিয়েছে। এই আনন্দ প্রভুত্বের আনন্দ নয়, ভোগের আনন্দ নয়, সম্মিলনের আনন্দ । এই আনন্দের ভিত্তিতে তপস্থা, আত্মসংযম। এর মধ্যেই উপনিষদের সেই বাণী : তেন ত্যক্তেন ভুল্পীথাঃ । २6