পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০
শান্তিনিকেতন

সগুণ কি নির‍্গুণ, তিনি personal কি impersonal। প্রেমের মধ্যে এই হাঁ না একসঙ্গে মিলে আছে। প্রেমের একটা কোটি সগুণ, আরএকটা কোটি নির‍্গুণ। তার এক দিক বলে ‘আমি আছি’, আর-এক দিক বলে ‘আমি নেই’। ‘আমি’ না হলেও প্রেম নেই, ‘আমি’ না ছাড়লেও প্রেম নেই। সেইজন্যে ভগবান সগুণ কি নির‍্গুণ সে-সমস্ত তর্কের কথা কেবল তর্কের ক্ষেত্রেই চলে; সে তর্ক তাঁকে স্পর্শও করতে পারে না।

 পাশ্চাত্য ধর্মতত্ত্বে বলে আমাদের অনস্ত উন্নতি—আমরা ক্রমাগতই তাঁর দিকে যাই, কোনো কালে তাঁর কাছে যাই নে। আমাদের উপনিষৎ বলেছেন আমরা তাঁর কাছে যেতেও পারি নে, আবার তাঁর কাছে যেতেও পারি; তাঁকে পাইও না, তাঁকে পাইও।

যতোবাচো নিবর্তন্তে অপ্রাপ্য মনসাসহ।
আনন্দং ব্রহ্মণো বিদ্বান্ ন বিভেতি কুতশ্চন॥

এমন অদ্ভুত বিরুদ্ধ কথা একই শ্লোকের দুই চরণের মধ্যে তো এমন সুস্পষ্ট করে আর কোথাও শোনা যায় নি। শুধু বাক্য ফেরে না, মনও তাঁকে না পেয়ে ফিরে আসে, এ একেবারে সাফ জবাব। অথচ সেই ব্রহ্মের আনন্দকে যিনি জেনেছেন তিনি আর কিছু থেকে ভয় পান না। তবেই তো যাঁকে একেবারেই জানা যায় না তাঁকে এমনি জানা যায় যে আর কিছু থেকেই ভয় থাকে না। সেই জানাটা কিসের জানা? আনন্দের জানা। প্রেমের জানা। এ হচ্ছে সমস্ত না-জানাকে লঙ্ঘন করে জানা। প্রেমের মধ্যেই না-জানার সঙ্গে জানার ঐকান্তিক বিরোধ নেই। স্ত্রী তার স্বামীকে জ্ঞানের পরিচয়ে সকল দিক থেকে সম্পূর্ণ না জানতে পারে, কিন্তু প্রেমের জানায়, আনন্দের জানায় এমন করে জানতে পারে যে কোনো জ্ঞানী তেমন করে জানতে পারে না। প্রেমের ভিতরকার এই এক অদ্ভুত রহস্য যে, যেখানে এক দিকে কিছুই