পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8०२ • শান্তিনিকেতন তাকে পুনরায় উজ্জ্বল করে দেখে কি আনন্দ বোধ হচ্ছে না ? এ আনন্দ কিসের জন্তে ? এ কি সফলতার মূর্তিকে প্রত্যক্ষ দেখে ? এ কি এই মনে করে যে আমরা যা করতে চেয়েছিলুম তা করে তুলেছি ? এ কি আমাদের আত্মকীর্তির গর্বাচুভবের আনন্দ ? তা নয়। কর্মকেই চরম মনে করে তার মধ্যে ডুবে থাকলে মানুষ কর্মকে নিয়ে আত্মশক্তির গর্ব উপলব্ধি করে। কিন্তু কর্মের ভিতরকার সত্যকে যখন আমরা দেখি তখন কর্মের চেয়ে বহুগুণে বড়ো জিনিসটিকে দেখি। তখন যেমন আমাদের অহংকার দূর হয়ে যায়, সন্ত্রমে মাথা নত হয়ে পড়ে, তেমনি আর-এক দিকে আনন্দে আমাদের বক্ষ বিস্ফারিত হয়ে ওঠে। তখন আমাদের আনন্দময় প্রভুকে দেখতে পাই, কেবল লৌহময় কলের আস্ফালনকে দেখি না। l Η এখানকার এই বিদ্যালয়ের মধ্যে একটি মঙ্গলচেষ্টা আছে। কিন্তু, সে কি কেবল একটি মঙ্গলের কল মাত্র ? কেবল নিয়ম-রচনা এবং নিয়মে চালানো ? কেবল ভাষা শেখানো, অঙ্ক কষানো, খেটে মরা এবং খাটিয়ে যারা ? কেবল মস্ত একটা ইস্কুল তৈরি করে মনে করা খুব একটা ফল পেলুম ? তা নয়। এই চেষ্টাকে বড়ো করে দেখা, এই চেষ্টার ফলকেই বড়ো ফল বলে। গর্ব করা, সে নিতান্তই ফাকি। মঙ্গল-অনুষ্ঠানে মঙ্গলফল লাভ হয় সন্দেহ নেই, কিন্তু সে গৌণ ফল মাত্র। আসল কথাটি এই যে, মঙ্গলকর্মের মধ্যে মঙ্গলময়ের আবির্ভাব আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যদি ঠিক জায়গায় দৃষ্টি মেলে দেখি তবে মঙ্গলকর্মের উপরে সেই বিশ্বমঙ্গলকে দেখতে পাই। মঙ্গল-অনুষ্ঠানের চরম সার্থকতা তাই। মঙ্গলকর্ম সেই বিশ্বকৰ্মাকে সত্ব্যদৃষ্টিতে দেখবার একটি সাধনা। অলস যে, সে তাকে দেখতে পায় না। নিরুদ্যম যে, তার চিত্তে তার প্রকাশ আচ্ছন্ন। এইজন্তেই কর্ম, নইলে কর্মের মধ্যেই কর্মের গৌরব থাকতে পারে না।