পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কী চাই?
৩৫

 ভার বাড়ে কখন? না, কেন্দ্রের দিকে ভারাকর্ষণ যখন বেশি হয়। পৃথিবীতে যে হাল্কা জিনিস আমরা সহজেই তুলছি, যদি বৃহস্পতি-গ্রহে যাই তবে সেখানে সেটুকুও আমাদের হাড় গুঁড়িয়ে দিতে পারে। কেননা, সেখানে এই কেন্দ্রের দিকের আকর্ষণ পৃথিবীর চেয়ে অনেক বেশি। আমরাও তাই দেখছি, আমাদের নিজের কেন্দ্রের দিকের টানটা অত্যন্ত বেশি— আমাদের স্বার্থ ভিতরের দিকেই টানছে, অহংকার ভিতরের দিকেই টানছে, এইজন্যেই সব জিনিসই অত্যন্ত ভারী হয়ে উঠছে। যা তুচ্ছ তা কেবলমাত্র আমার ওই ভিতরের টানের জোরেই আমাকে কেবলই চাপছে— সব জিনিসই আমাকে ঠেসে ধরেছে, সব কথাই আমাকে ঠেলে দিচ্ছে, ক্ষণকালের শান্তির দ্বারা এটাকে ভুলে থেকে আমাদের লাভটা কী?

 এই চাপটা হাল্কা হয় কখন? প্রেমে। তখন যে ওই টানটা বাহিরের দিকে যায়। আমাদের জীবনে অনেকবার তার পরিচয় পেয়েছি। যেদিন প্রণয়ীর সঙ্গে আমাদের প্রণয় বিশেষভাবে সার্থক হয়েছে সেদিন কেবল যে আকাশের আলো উজ্জ্বলতর, বনের শ্যামলতা শ্যামলতর হয়েছে তা নয়, সেদিন আমাদের সংসারের ভারাকর্ষণের টান একেবারে আলগা হয়ে গেছে। অন্যদিন ভিক্ষুককে যখন একপয়সামাত্র দিই সেদিন তাকে আধুলি দিয়ে ফেলি। অর্থাৎ, অন্যদিন এক পয়সার যে ভার ছিল আজ বত্রিশ পয়সার সেই ভার। অন্যদিন যে কাজে হয়রান হয়ে পড়তুম আজ সে কাজে ক্লান্তি নেই— হঠাৎ কাজ হাল্কা হয়ে গেছে। পয়সা সেই পয়সাই আছে, কাজ সেই কাজই আছে— কেবল তার ওজন কমে গেছে। কেননা টান যে আজ আমার নিজের কেন্দ্রের দিকে নয়; প্রেম যে আমাকে বাইরে টান দিয়ে একেবারে এক মুহূর্তে সমস্ত জগতের বোঝা নামিয়ে দিয়ে গেছে।

 আমাদের সাধনা যেমনই হোক আমাদের সংসার সেই সঙ্গে যদি