পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬
শান্তিনিকেতন

হাল্কা হতে না থাকে তবে বুঝব যে হল না। যদি বুঝি টাকার ওজন তেমনি ভয়ানক আছে, উপকরণের বোঝা তেমনিই আমাকে চেপে আছে, তার মধ্যে অতিছোটোটুকুকেও ফেলে দিতে পারি এমন বল আমার নেই, যদি দেখি কাজ যত বড়ো তার ভার যেন তার চেয়ে অনেক বেশি, তা হলে বুঝতে হবে প্রেম জোটে নি— আমাদের বরণসভায় বর আসে নি।

 তবে আর ওই শান্তিটুকু নিয়ে কী হবে? ওতে আমাদের আসল জিনিসটা ফাঁকি দিয়ে অল্পে সন্তুষ্ট করে রাখবে। প্রেমের মধ্যে শুধু শান্তি নেই, তাতে অশাস্তিও আছে। জোয়ারের জলের মতো কেবল যে তার পূর্ণতা তা নয়, তারই মতো তার গতিবেগও আছে। সে আমাদের ভরিয়ে দিয়ে বসিয়ে রাখবে না, সে আমাদের ভাঁটার মুখের থেকে ফিরিয়ে উল্টো টানে টেনে নিয়ে যাবে— তখন এই অচল সংসারটাকে নিয়ে কেবলই গুণ-টানাটানি লগি-ঠেলাঠেলি করে মরতে হবে না— সে হুহু করে ভেসে চলবে।

 যতদিন সেই প্রেমের টান না ধরে ততদিন শান্তিতে কাজ নেই ততদিন অশান্তিকে যেন অনুভব করতে পারি। ততদিন যেন বেদনাকে নিয়ে রাত্রে শুতে যাই এবং বেদনাকে নিয়ে সকালবেলায় জেগে উঠি— চোখের জলে ভাসিয়ে দাও, স্থির থাকতে দিয়ো না।

 প্রতিদিন প্রাতে যখন অন্ধকারের দ্বার উদ্ঘাটিত হয়ে যায়, তখন যেন দেখতে পাই বন্ধু দাঁড়িয়ে আছ— সুখের দিন হোক, দুঃখের দিন হোক, বিপদের দিন হোক, তোমার সঙ্গে আমার দেখা হল, আজ আমার আর ভাবনা নেই, আমার আজ সমস্তই সহ্য হবে। যখন প্রেম না থাকে, হে সখা, তখনই শান্তির জন্যে দরবার করি। তখন অল্প পুঁজিতে কোনো আঘাত সইতে পারি নে। কিন্তু যখন প্রেমের অভ্যুদয় হয় তখন যে দুঃখ যে অশান্তিতে সেই প্রেমের পরীক্ষা হবে সেই