পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রার্থনা
৩৯

মতো ঠেলে দিয়ে তাকে বলে উঠতেই হবে: যেনাহং নামৃতা স্যাম্ কিমহং তেন কুর্যাম্।

 কিন্তু মৈত্রেয়ী ওই-যে বলেছিলেন ‘আমি যাতে অমৃতা না হব তা নিয়ে আমি কী করব’, তার মানেটা কী? অমর হওয়ার মানে কি এই পার্থিব শরীরটাকে অনন্তকাল বহন করে চলা? অথবা মৃত্যুর পরেও কোনোরূপে জন্মান্তরে বা অবস্থান্তরে টিঁকে থাকা? মৈত্রেয়ী যে শরীরের অমরতা চান নি এবং আত্মার নিত্যতা সম্বন্ধেও তাঁর কোনো দুশ্চিন্তা ছিল না, এ কথা নিশ্চিত। তবে তিনি কিভাবে অমৃতা হতে চেয়েছিলেন?

 তিনি এই কথা বলেছিলেন, সংসারে আমরা তো কেবলই একটার ভিতর দিয়ে আর-একটাতে চলেছি— কিছুতেই তো স্থির হয়ে থাকতে পারছি নে। আমার মনের বিষয়গুলোও সরে যায়, আমার মনও সরে যায়। যাকে আমার চিত্ত অবলম্বন করে তাকে যখন ছাড়ি তখন তার সম্বন্ধে আমার মৃত্যু ঘটে। এমনি করে ক্রমাগত এক মৃত্যুর ভিতর দিয়ে আর মৃত্যুতে চলেছি— এই-যে মৃত্যুর পর্যায় এর আর অন্ত নেই।

 অথচ আমার মন এমন কিছুকে চায় যার থেকে তাকে আর নড়তে হবে না, যেটা পেলে সে বলতে পারে ‘এ ছাড়া আমি আর বেশি চাই নে’, যাকে পেলে আর ছাড়াছাড়ির কোনো কথাই উঠবে না। তা হলেই তো মৃত্যুর হাত একেবারে এড়ানো যায়। এমন কোন্ মানুষ এমন কোন্ উপকরণ আছে যাকে নিয়ে বলতে পারি, এই আমার চিরজীবনের সম্বল লাভ হয়ে গেল— আর কিছুই দরকার নেই!

 সেইজন্যেই তো স্বামীর ত্যক্ত বিষয়সম্পত্তি ঠেলে ফেলে দিয়ে মৈত্রেয়ী বলে উঠেছিলেন, ‘এ-সব নিয়ে আমি কী করব? আমি যে অমৃতকে চাই।’

 আচ্ছা বেশ, উপকরণ তো অমৃত নয়, তা হলে অমৃত কী! আমরা