পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিকারশঙ্কা
৪৭

 তার পরে আমাদের এই সতীর প্রেমে শ্রী থাকবে, সৌন্দর্যের আনন্দময়তা থাকবে। কিন্তু যদি হ্রীর অভাব ঘটে, যদি ধী’র বিকার ঘটে, তবে এই শ্রীও নষ্ট হয়ে যায়।

 সতী-আত্মা যে প্রার্থনা উচ্চারণ করেছিলেন তার মধ্যে প্রেমের কোনো অঙ্গের অভাব ছিল না। তিনি যে অমৃত চেয়েছিলেন তা পরিপূর্ণ প্রেম— তা কর্মহীন জ্ঞানহীন প্রমত্ত প্রেম নয়। তিনি বলেছিলেন, অসতে মা সদ্‌গময়— অসত্য হতে আমাকে সত্যে নিয়ে যাও। তিনি বলেছিলেন, আমি যাঁকে চাই তিনি যে সত্য; নিজেকে সকল দিকে সত্যের নিয়মে, সত্যের বন্ধনে, না বাঁধলে তাঁর সঙ্গে যে আমার পরিণয়বন্ধন সমাপ্ত হবে না। বাক্যে চিন্তায় কর্মে সত্য হতে হবে, তা হলেই যিনি বিশ্বজগতে সত্য, যিনি বিশ্বসমাজে সত্য, তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্মিলন সত্য হয়ে উঠবে— নইলে পদে পদে বাধতে থাকবে। এ সাধনা কঠিন সাধনা— এ পুণ্যের সাধনা, এ কর্মের সাধনা।

 তার পরে তিনি বলেছিলেন: তমসো মা জ্যোতির্গময়। তিনি যে জ্ঞানস্বরূপ— বিশ্বজগতের মধ্যে তিনি যেমন ধ্রুব সত্যরূপে আছেন, তেমনি সেই সত্যকে যে আমরা জানছি সেই জ্ঞান যে জ্ঞানস্বরূপেরই প্রকাশ। সেইজন্যই তো গায়ত্রীমন্ত্রে এক দিকে ভূলোক ভূবর্লোক স্বর্লোকের মধ্যে তাঁর সত্য প্রত্যক্ষ করবার নির্দেশ আছে, তেমনি অন্য দিকে আমাদের জ্ঞানের মধ্যে তাঁর জ্ঞানকে উপলব্ধি করবারও উপদেশ আছে— যিনি ধীকে প্রেরণ করছেন তাঁকে জ্ঞানের মধ্যে ধী-স্বরূপ বলেই জানতে হবে। বিশ্বভুবনের মধ্যে সেই সত্যের সঙ্গে মিলতে হবে, জ্ঞানের মধ্যে সেই জ্ঞানের সঙ্গে মিলতে হবে। ধ্যানের দ্বারা, যোগের দ্বারা এই মিলন।

 তার পরের প্রার্থনা, মৃত্যোৰ্মামৃতংগময়। আমরা আমাদের প্রেমকে মৃত্যুর মধ্যে পীড়িত খণ্ডিত করছি; তোমার অনন্ত প্রেম