পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেখা
৫১

চন্দ্রসূর্য-খচিত প্রাণে-সৌন্দর্যে-পরিপূর্ণ বিশ্বজগৎ বৃথা আমাদের চারি দিকে অহোরাত্র নানা আকারে আত্মপ্রকাশ করছে। এই জগতের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করার চরম সফলতা কি বিজ্ঞান? সূর্যের চার দিকে পৃথিবী ঘুরছে, নক্ষত্রগুলি এক-একটি সূর্যমণ্ডল—এই কথাগুলি আমরা জানব বলেই এত বড়ো জগতের সামনে আমাদের এই দুটি চোখের পাতা খুলে গেছে? এ জেনেই বা কী হবে?

 জেনে হয়তো অনেক লাভ হতে পারে, কিন্তু জানার লাভ সে তো জানারই লাভ; তাতে জ্ঞানের তহবিল পূর্ণ হচ্ছে— তা হোক। কিন্তু, আমি যে বলছি চোখে দেখার কথা। আমি বলছি, এই চোখেই আমরা যা দেখতে পাব তা এখনও পাই নি। আমাদের সামনে আমাদের চার দিকে যা আছে তার কোনোটাকেই আমরা দেখতে পাই নি— ওই তৃণটিকেও না। আমাদের মনই আমাদের চোখকে চেপে রয়েছে— সে যে কত মাথামুণ্ড ভাবনা নিয়ে আছে তার ঠিকানা নেই— সেই অশনবসনের ভাবনা নিয়ে সে আমাদের দৃষ্টিকে ঝাপসা করে রেখেছে— সে কত লোকের মুখ থেকে কত সংস্কার নিয়ে জমা করেছে— তার যে কত বাঁধা শব্দ আছে, কত বাঁধা মত আছে, তার সীমা নেই— সে কাকে যে বলে শরীর কাকে যে বলে আত্মা, কাকে যে বলে হেয় কাকে যে বলে শ্রেয়, কাকে যে বলে সীমা কাকে যে বলে অসীম তার ঠিকানা নেই— এই সমস্ত সংস্কারের দ্বারা চাপা দেওয়াতে আমাদের দৃষ্টি নির্মল নির্মুক্ত ভাবে জগতের সংস্রব লাভ করতেই পারে না।

 আলোক তাই প্রত্যহই আমাদের চক্ষুকে নিদ্রালসতা থেকে ধৌত করে দিয়ে বলছে, ‘তুমি স্পষ্ট করে দেখো, তুমি নির্মল হয়ে দেখো, পদ্ম যেরকম সম্পূর্ণ উন্মুক্ত হয়ে সূর্যকে দেখে তেমনি করে দেখো।’ কাকে দেখবে? তাঁকে, যাকে ধ্যানে দেখা যায়? না তাঁকে না, যাঁকে চোখে