পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫২
শান্তিনিকেতন

দেখা যায় তাঁকেই। সেই রূপের নিকেতনকে, যার থেকে গণনাতীত রূপের ধারা অনন্তকাল থেকে ঝরে পড়ছে। চারি দিকেই রূপ— কেবলই এক রূপ থেকে আর-এক রূপের খেলা; কোথাও তার আর শেষ পাওয়া যায় না— দেখেও পাই নে, ভেবেও পাই নে। রূপের ঝরনা দিকে দিকে থেকে কেবলই প্রতিহত হয়ে সেই অনন্তরূপসাগরে গিয়ে ঝাঁপ দিয়ে পড়ছে। সেই অপরূপ অনন্তরূপকে তাঁর রূপের লীলার মধ্যেই যখন দেখব তখন পৃথিবীর আলোকে একদিন আমাদের চোখ মেলা সার্থক হবে, আমাদের প্রতিদিনকার আলোকের অভিষেক চরিতার্থ হবে। আজ যা দেখছি, এই-যে চারি দিকে আমার যে-কেউ আছে, যা-কিছু আছে, এদের একদিন যে কেমন করে, কী পরিপূর্ণ চৈতন্যযোগে দেখব তা আজ মনে করতে পারি নে—কিন্তু এটুকু জানি, আমাদের এই চোখের দেখার সামনে সমস্ত জগৎকে সাজিয়ে আলোক আমাদের কাছে যে আশার বার্তা আনছে তা এখনও কিছুই সম্পূর্ণ হয় নি। এই গাছের রূপটি যে তাঁর আনন্দরূপ, সে দেখা এখনও আমাদের দেখা হয় নি—মানুষের মুখে যে তাঁর অমৃতরূপ, সে দেখার এখনও অনেক বাকি— ‘আনন্দরূপমমৃতং’ এই কথাটি যেদিন আমার এই দুই চক্ষু বলবে সেই দিনেই তারা সার্থক হবে। সেইদিনই তাঁর সেই পরমসুন্দর প্রসন্নমুখ, তাঁর ‘দক্ষিণং মুখং’, একেবারে আকাশে তাকিয়ে দেখতে পাব। তখনই সর্বত্রই নমস্কারে আমাদের মাথা নত হয়ে পড়বে— তখন ওষধিবনস্পতির কাছেও আমাদের স্পর্ধা থাকবে না— তখন আমরা সত্য করেই বলতে পারব: ষো বিশ্বং ভুবনমাবিবেশ, য ওষধিষু যো বনস্পতিষু, তস্মৈ দেবায় নমোনমঃ।

 ৪ পৌষ