পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৬
শান্তিনিকেতন

প্রাণের নৃত্য চলতে থাকবে, আমার হৃৎপিণ্ডের নৃত্য থামবে না, সর্বাঙ্গে রক্ত নাচবে এবং লক্ষ লক্ষ জীবকোষ আমার সমস্ত শরীরে সেই জ্যোতিষ্কসভার সংগীতচ্ছন্দেই স্পন্দিত হতে থাকবে।

 ‘বাজে বাজে রম্যবীণা বাজে।’ আবার, আমাদের ওস্তাদজি আমাদের হাতেও একটি করে ছোটো বীণা দিয়েছেন। তাঁর ইচ্ছে আমরাও তাঁর সঙ্গে সুর মিলিয়ে বাজাতে শিখি। তাঁর সভায় তাঁরই সঙ্গে বসে আমরা একটু একটু সংগত করব, এই তাঁর স্নেহের অভিপ্রায়। জীবনের বীণাটি ছোটো, কিন্তু এতে কত তারই চড়িয়েছেন। সব তারগুলি সুর মিলিয়ে বাঁধা কি কম কথা! এটা হয় তো ওটা হয় না, মন যদি হল তো আবার শরীর বাদী হয়, একদিন যদি হল তো আবার আর-একদিন তার নেবে যায়। কিন্তু, ছাড়লে চলবে না। একদিন তাঁর মুখ থেকে এ কথাটি শুনতে হবে— ‘বাহবা, পুত্র, বেশ।’ এই জীবনের বীণাটি একদিন তাঁর পায়ের কাছে ‘গুঞ্জরিয়া গুঞ্জরিয়া’ তার সব রাগিণীটি বাজিয়ে তুলবে। এখন কেবল এই কথাটি মনে রাখতে হবে যে, সব তারগুলি বেশ এঁটে বাঁধা চাই— ঢিল দিলেই ঝন্‌ঝন্‌ খন‍্খন্ করে। যেমন এঁটে বাঁধতে হবে তেমনি তাকে মুক্তও রাখতে হবে— তার উপরে কিছু চাপা পড়লে সে আর বাজতে চায় না। নির্মল সুরটুকু যদি চাও তবে দেখো তারে যেন ধুলো না পড়ে, মরচে না পড়ে— আর প্রতিদিন তাঁর পদপ্রান্তে বসে প্রার্থনা কোরো, ‘হে আমার গুরু, তুমি আমাকে বেসুর থেকে সুরে নিয়ে যাও।’

 ৫ পৌষ