পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শাস্তিনিকেতনে ৭ই পৌষের উৎসব ג9א ব্যস্ত হয়ে ওঠে তার সকালবেলাকার গীতোৎসবের নিত্য নিমন্ত্রণ রক্ষা করবার জন্যে । আর, প্রভাতের আনন্দসভাটিকে সাজিয়ে তোলবার জন্য একটি অন্ধকার পুরুষ সমস্ত রাত্রি কত যে গোপন আয়োজন করে তার কি সীমা আছে ! শুতে যাবার আগে একবার যদি কেবল তাকিয়ে দেখি তবে দেখতে পাই নে কি, জগতের নিত্য-উৎসবের মহাবিজ্ঞাপন সমস্ত আকাশ জুড়ে কে টাঙিয়ে দিয়েছে ? এর মধ্যে আমাদের উৎসবটা কবে ? যেদিন আমরা সময় করতে পারি সেই দিন। যেদিন হঠাৎ হু শ হয় যে আমাদের নিমন্ত্রণ আছে এবং সে নিমন্ত্রণ প্রতিদিন মারা যাচ্ছে । যেদিন স্নান ক’রে, সাজ ক’রে, ঘর ছেড়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়ি । সেইদিন উৎসবের সকালে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলি– ‘বাঃ, আজ আলোটি কী মধুর, কী পবিত্র ? অারে মূঢ়, এ আলো কবে মধুর ছিল না, কবে পবিত্র ছিল না ? তুমি একটা বিশেষ দিনের গায়ে একটা বিশেষ চিহ্ন কেটে দিয়েছ বলেই কি আকাশের আলো উজ্জল হয়ে জলেছে ? আর কিছু নয়— আজকে নিমন্ত্রণরক্ষা করতে এসেছি, অন্যদিন করি নি, এইমাত্র তফাত । আয়োজনটা এমনিই প্রতিদিনই ছিল, প্রতিদিনই আছে । জগৎ ষে আনন্দরূপ এইটে আজ দেখব বলে কাজকর্ম ফেলে এসেছি। শুধু তাই নয়, আমিও নিজের আনন্দময় স্বরূপটিকেই ছুটি দিয়েছি ; আজ বলেছি, থাকু আজ দেনাপাওনার টানাটানি, ঘুচুক আজ আত্মপরের ভেদ, মরুক আজ সমস্ত কার্পণ্য, বাহির হোক আজ যত ঐশ্বর্য আছে। যে আনন্দ জলে স্থলে আকাশে সর্বত্র বিরাজমান সেই আনন্দকে আজ আমার আনন্দনিকেতনের মধ্যে দেখব। যে উৎসব নিখিলের উৎসব সেই উৎসবকে আজ আমার উৎসব করে তুলব।