পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দীক্ষা به وي সমাদর করে ভিতরে ডেকে নাও, আমাদের তুচ্ছ জীবনের প্রতিদিনের যে দৈন্য তাকে সম্পদে পূর্ণ করে। হে দীক্ষাদাতা, হে গুরু, এখনও যদি প্রস্তুত হয়ে না থাকি তো প্রস্তুত করো, আঘাত করো, চেতনাকে সর্বত্র উদ্যত করো— ফিরিয়ে দিয়ে না, ফিরিয়ে দিয়ে না— দুর্বল ব’লে তোমার সভাসদদের সকলের পশ্চাতে ঠেলে রেখে না। এই জীবনে সত্যকে গ্রহণ করতেই হবে— নিৰ্ভয়ে এবং অসংকোচে। অসত্যের ভূপাকার আবর্জনার মধ্যে ব্যর্থ জীবনকে নিক্ষেপ করব না। দীক্ষা গ্রহণ করতে হবে— তুমি শক্তি দাও। ৭ পৌষ মানুষ কালকের উৎসবমেলার দোকানি-পসারিরা এখনও চলে যায় নি। সমস্ত রাত তারা এই মাঠের মধ্যে আগুন জেলে, গল্প ক’রে, গান গেয়ে, বাজনা বাজিয়ে কাটিয়ে দিয়েছে। কৃষ্ণচতুর্দশীর শীতরাত্রি। আমি যখন আমাদের নিত্য উপাসনার স্থানে এসে বসলুম তখনও রাত্রি প্রভাত হতে বিলম্ব আছে। চারি দিকে নিবিড় অন্ধকার ; এখানকার ধূলিবাম্পশূন্ত স্বচ্ছ আকাশের তারাগুলি দেবচক্ষুর অক্লিষ্ট জাগরণের মতো অক্লান্তভাবে প্রকাশ পাচ্ছে । মাঠের মাঝে মাঝে আগুন জলছে। ভাঙা মেলার লোকেরা শুকনো পাতা জালিয়ে আগুন প্রোয়াচ্ছে । অন্যদিন এই ব্রাহ্মমুহূর্তে কী শাস্তি, কী স্তব্ধতা ! বাগানের সমস্ত পাখি জেগে গেয়ে উঠলেও সে স্তব্ধতা নষ্ট হয় না, শালবনের মর্মরিত পল্লবরাশির মধ্যে পৌষের উত্তরে হাওয়া দুরন্ত হয়ে উঠলেও সেই শাস্তিকে স্পর্শ করে না ।