পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ae শাস্তিনিকেতন আইন, কত শাসন, কত রকম-বেরকমের শিক্ষাদীক্ষা। কী করলে নানা মামুষের নানা অহংকারকে সাজিয়ে একটি বিচিত্র সুন্দর ঐক্য স্থাপিত হতে পারে এই চেষ্টায় এই তপস্যায় পৃথিবী জুড়ে সমস্ত মানুষ ব্যস্ত হয়ে রয়েছে । এই চেষ্টার তাড়নাতেই মানুষ আপনার একটা স্বষ্টি তৈরি করে তুলছে। নিখিল স্বষ্টি থেকে এই অহংকারের মধ্যে নির্বাসিত হওয়াতেই তার এই নিজের স্বষ্টির এত অধিক প্রয়োজন হয়ে উঠেছে। মানুষের ইতিহাস কেবলই এই স্বষ্টির ইতিহাস, এই সমন্বয়ের ইতিহাস ; তার সমস্ত ধর্ম ও কর্ম, সমস্ত ভাব ও কল্পনার মধ্যে কেবলই এই অমিলের মেলবার ইতিহাস রচিত হচ্ছে । পেতে চাই, পেতে চাই, মিলতে চাই, মিলতে চাই’— এ ছাড়া আর কথা নেই। +. সেইজন্যে এই মাঠ জুড়ে নানা লোকের নানা স্বতন্ত্র প্রয়োজনের নানা কলরবের মধ্যে যখন শুনলুম একজন গান গাচ্ছে ‘হরি আমায় বিনা মূল্যে পার করে দাও, তখন সেই গানটির ভিতর এই সমস্ত কলরবের মাঝখানটির কথা আমি শুনতে পেলুম। সমস্ত চাওয়ার ভিতরকার চাওয়া হচ্ছে এই পার হতে চাওয়া । যে বিচ্ছিন্ন সে কেবলই বলছে, ‘ওগে, আমাকে এই বিচ্ছেদ উত্তীর্ণ করে দাও।” এই বিচ্ছেদ পার হলেই তবে যে প্রেম পূর্ণ হয়। এই প্রেম পূর্ণ না হলে কোনো-কিছু পেয়েই আমার তৃপ্তি নেই– নইলে কেবলই মৃত্যু থেকে মৃত্যুতে যাচ্ছি— একের থেকে আরে ঘুরে মরছি— মিলে গেলেই এই বিষম আপদ চুকে যায়। কিন্তু, যে মিলটি হচ্ছে অমৃত তাকে পেতে গেলেই তো বিচ্ছেদের ভিতর দিয়েই পেতে হয়। মিলে থাকলে তো মিলকে পাওয়া হয় না। সেইজন্তে ঈশ্বর যে অহংকার দিয়ে আমাদের বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন সেটা তার প্রেমেরই লীলা। অহংকার না হলে বিচ্ছেদ হয় না, বিচ্ছেদ