পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭২
শান্তিনিকেতন

মিলনের সামঞ্জস্য ঘটে; যখন বিচ্ছেদ মিলনকে নাশ করে না এবং মিলনও বিচ্ছেদকে গ্রাস করে না; দু’ই যখন একসঙ্গে থাকে অথচ তাদের মধ্যে আর বিরোধ থাকে না, তারা পরস্পরের সহায় হয়।

 এই ভেদ ও ঐক্যের সামঞ্জস্যের জন্যেই আমাদের সমস্ত আকাঙ্ক্ষা। আমরা এর কোনোটাকেই ছাড়তে চাই নে। আমাদের যা-কিছু প্রয়াস, ঘা-কিছু সৃষ্টি সে কেবল এই ভেদ ও অভেদের অবিরুদ্ধ ঐক্যের মূর্তি দেখবার জন্যেই, দুইয়ের মধ্যেই এককে লাভ করবার জন্যে। আমাদের প্রেমের ভগবান যখন আমাদের পার করবেন তখন তিনি আমাদের চিরদুঃখের বিচ্ছেদকেই চিরন্তন আনন্দের বিচ্ছেদ করে তুলবেন। তখন তিনি আমাদের এই বিচ্ছেদের পাত্র ভরেই মিলনের সুধা পান করাবেন। তখনই বুঝিয়ে দেবেন বিচ্ছেদটি কী অমূল্য রত্ন।

 ৮ পৌষ

ভাঙা হাট

মানুষের মনটা কেবলই যেমন বলছে ‘চাই চাই চাই’ তেমনি তার পিছনে পিছনেই আর-একটি কথা বলছে, ‘চাই নে, চাই নে, চাই নে।’ এইমাত্র বলে ‘না হলে নয়’, পরক্ষণেই বলে ‘কোনো দরকার নেই’।

 ভাঙা মেলার লোকেরা কাল রাত্রে বলেছিল ‘গোটাকতক কাঠকুটা লতাপাতা পেলে বেঁচে যাই’, তখন এমনি হয়েছিল যে না হলে চলে না। শীতে খোলা মাঠের মধ্যে ওই একটুখানি আশ্রয় রচনা করাই জগতের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুতর প্রয়োজন-সাধন বলে মনে হয়েছিল। কোনোমতে একটা চুলো বানিয়ে, শুকনো পাতা জ্বালিয়ে, যা হোক কিছু একটা রেঁধে নিয়ে আহার করবার চেষ্টাও অত্যন্ত প্রবল হয়েছিল। এ চাওয়া ও চেষ্টার কাছে পৃথিবীর আর-সমস্ত ব্যাপারই ছোটো হয়ে গিয়েছিল।