পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উৎসবশেষ
৭৫

করে বোঝা যায়। আর-একরকম উপলব্ধি হচ্ছে সমকক্ষতার উপলব্ধি। সেই স্থলে আমাকে দ্বারের বাইরে বসে থাকতে হয় না, কতকটা এক জাজিমে বসা চলে।

 প্রতিদিন যখন আমরা দীনভাবে থাকি তখন নিরানন্দ চিত্তটা আনন্দময়ের কাছে ভিক্ষুকতা করে। উৎসবের দিনে সেও বলতে চায়, ‘আজ কেবল নেওয়া নয়, আজ আমিও তোমার মতো আনন্দ করব— আজ আমার দীনতা নেই, কৃপণতা নেই, আজ আমার আনন্দ এবং আমার ত্যাগ তোমারই মতো অজস্র।’

 এইরূপে ঐশ্বর্য জিনিসটি কী, অকৃপণ প্রাচুর্য কাকে বলে, সেটা নিজের মধ্যে অনুভব করলে ঈশ্বর যে কেবলমাত্র আমার অনুগ্রহকর্তা নন, তিনি যে আমার আত্মীয়, সেটা আমি বুঝি এবং প্রমাণ করি।

 কিন্তু, এইটে বুঝতে এবং প্রচার করতে গিয়ে অনেক সময় শেষে দুঃখ পেতে হয়। পরদিনের ছড়ানো উচ্ছিষ্ট, গলা বাতি এবং শুকনো মালার দিকে তাকিয়ে মন উদাস হয়ে যায়; তখন আর চিত্তের রাজকীয় ঔদার্য থাকে না; হিসাবের কথাটা মনে পড়ে মন ক্লিষ্ট হয়ে ওঠে।

 কিন্তু, দুঃখ পেতে হয় না তাকে যে প্রতিদিনই কিছু কিছু সম্বল জমিয়ে তোলে, প্রতিদিনই যে লোক উৎসবের আয়োজন করে চলেছে, যার উৎসবদিনের সঙ্গে প্রতিদিনের সম্পূর্ণ পার্থক্য নেই— পরস্পর নাড়ীর যোগ আছে।

 এটি না হলেই আমাদের ঋণ করে উৎসব করতে হয়। আনন্দ করি বটে, কিন্তু সে আনন্দের অধিকাংশই ঠিক নিজের কড়ি দিয়ে করি নে, তার পনেরো-আনাই ধারে চালাই। লোকসমাগম থেকে ধার করি; ফুলের মালা থেকে, আলো থেকে, সভাসজ্জা থেকে ধার করি; গান থেকে, বাজনা থেকে, বক্তৃতা থেকে ধার নিই। সেদিনকার উত্তেজনায়