পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৬
শান্তিনিকেতন

চেতনাই থাকে না যে ধারে চালাচ্ছি; পরদিনে যখন ফুল শুকোয়, আলো নেবে, লোক চলে যায়, তখন দেনার প্রকাণ্ড শূন্যতাটা চোখে পড়ে হৃদয়কে ব্যাকুল করে।

 আমাদের এই দৈন্যবশতই উৎসবদেবতাকে আমরা উৎসবের সঙ্গে সঙ্গেই বিসর্জন দিয়ে বসি, উৎসবের অধিপতিকে প্রতিদিনের সিংহাসনে বসাবার কোনো আয়োজন করি নে।

 আমাদের সৌভাগ্য এই যে, আমরা কয়জন প্রতিদিন প্রত্যুষে এই মন্দিরপ্রাঙ্গণে একত্রে মিলে কিছু কিছু জমাচ্ছিলুম, আমরা এই উৎসবের মেলায় একেবারেই রবাহূত বিদেশীর মতো জুটি নি, আমাদের প্রতিদিনের সকালবেলার সব-ক’টিই হাতে হাতেই বাজে খরচ হয়ে যায় নি। আমরা উৎসবকর্তাকে বোধ করি বলতে পেরেছি যে, ‘তোমার সঙ্গে আমার কিছু পরিচয় আছে, তোমার নিমন্ত্রণ আমি পেয়েছি।’

 তার পরে আমাদের উৎসবকে হঠাৎ এক দিনেই সাঙ্গ করে দেব না, এই উৎসবকে আমাদের দৈনিক উৎসবের মধ্যে প্রবাহিত করে দেব। প্রতি।দন প্রাতঃকালেই আমাদের দশজনের এই উৎসব চলতে থাকবে। আমাদের প্রতি দিনের সমস্ত তুচ্ছতা এবং আত্মবিশ্বতির মধ্যে অন্তত একবার করে দিনারম্ভে জগতের নিত্য-উৎসবের ঐশ্বর্যকে উপলব্ধি করে যাব। যখন প্রত্যহই উষা তাঁর আলোকটি হাতে করে পূর্বদিকের প্রান্তে এসে দাঁড়াবেন তখন আমরা কয়জনেই স্তব্ধ হয়ে বসে অনুভব করব, আমাদের প্রত্যেক দিনই মহিমান্বিত, ঐশ্বর্যময়—আমাদের জীবনের তুচ্ছতা তাকে লেশমাত্র মলিন করে নি— প্রতিদিনই সে নবীন, সে উজ্জ্বল, সে পরমাশ্চর্য— তার হাতের অমৃতপাত্র একেবারে উপুড় করে ঢেলেও তার এক বিন্দু ক্ষয় হয় না।

 ৯ পৌষ