পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সঞ্চয়তৃষ্ণা
৭৯

বসে। যদি দেখি যে মনের মতো ফল হচ্ছে না, তা হলে জবর্দস্তি করতে ইচ্ছা করে; তখন নিজের শক্তি ও অধিকারকে নয়, অন্যেরই বুদ্ধি ও স্বভাবকে ধিক‍্কার দিতে প্রবৃত্তি জন্মে। তখন আর মনের সঙ্গে, শ্রদ্ধার সঙ্গে, বলতে পারি নে যে, ঈশ্বর তাঁর বহুধাশক্তিযোগে বিচিত্র উপায়ে বিচিত্র মানবের মঙ্গল করুন। তখন আমাদের অসহিষ্ণু উদ্যম এই কথাই বলতে থাকে যে আমারই শক্তি, আমারই বাক্য, আমারই উপায়ে পৃথিবীর লোককে আমারই মতে বাধ্য করে তাদের ভালো করুক।

 সেইজন্যে ওই আমাদের প্রতি দিনের উপাসনা থেকে এই-যে কিছু কিছু করে কথা বাঁচাচ্ছি একেই আমি ভয় করি। এই কথা আমার বোঝা না হোক, আমার বন্ধন না হোক, আমার পথের বাধা না হোক। এই কথা সম্পূর্ণই তোমার সেবায় উৎসর্গীক্বত মনে করে যেন নিজ খাতে এর কোনো হিসাব না রাখি। এর যদি কোনো ফল থাকে তবে তুমি ফলাও, আমার মমতার নাড়ী বিচ্ছিন্ন করে এ যেন ভূমিষ্ঠ হয়। হে নীরব, এই প্রভাতের উপাসনার সমস্ত বাক্যকে তুমি গ্রহণের দ্বারাই সফল করো, আমার কণ্টকিত অহংকারের বৃত্ত থেকে একে একেবারে উৎপাটিত করে নাও।

 ১০ পৌষ

পার করো

সেই-যে সেদিন ভাঙা মেলার ভোর রাত্রে নানা হাসিতামাশা-গোলমাল-তুচ্ছকথার মাঝখানে গান উঠেছিল ‘হরি, আমায় পার করো’, সে আমি ভুলতে পারছি নে; সে আমাকে আজও বিস্মিত করছে।

 এই-যে কথাটা মানুষ এত দিন থেকে বলে আসছে ‘আমায় পার