পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮০
শান্তিনিকেতন

করো’, এটা একটা আশ্চর্য কথা। তার এই আকাঙ্ক্ষাটা আপনাকে আপনি সম্পূর্ণ জানে কি না তাও বুঝতে পারি নে।

 যদি কোনো সাধক সংসারের সমস্ত চেষ্টা ছেড়েছুড়ে দিয়ে তাঁর সাধনসমুদ্রের কূলে এসে দাঁড়িয়ে বলেন ‘হে সিদ্ধিদাতা, তুমি আমাকে সিদ্ধির কূলে পার করে দাও’, তবে তার মানে বুঝতে পারি। কিন্তু, যার সম্মুখে কোনো উদ্দেশ্য নেই, কোনো সাধনা নেই— তার নাবিক কোথায়, তার সমুদ্র কোথায়, সে কী পার হতে চাচ্ছে? তার এ পারটাই বা কোথায় আর ও পারটাই বা কোথায়?

 আমরা আমাদের কাজকর্মের ভিড়ের মাঝখানে থেকেই বলছি ‘হরি, পার করো’; গাড়োয়ান যখন গাড়ি চালাচ্ছে, বলছে ‘পার করো’; মুদি যখন চাল ডাল ওজন করছে, বলছে ‘পার করো’।

 মনে কোরো না তারা বলছে ‘আমাদের এই কর্ম হতেই পার করো’। তারা কর্মের মধ্যে থেকেই পার হতে চাচ্ছে, সেইজন্যে গান গাবার সময় তাদের কাজ কামাই যাচ্ছে না।

 হে আনন্দসমুদ্র, এ পারও তোমার, ও পারও তোমার। কিন্তু, একটা পারকে যখন আমার পার বলি তখন ও পারের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ ঘটে। তখন সে আপনার সম্পূর্ণতার অনুভব হতে ভ্রষ্ট হয়, ও পারের জন্যে ভিতরে ভিতরে কেবলই তার প্রাণ কাঁদতে থাকে। আমার পারের আমিটি তোমার পারের তুমির বিরহে বিরহিণী। পার হবার জন্যে তাই এত ডাকাডাকি।

 এইটে আমার ঘর বলে আমি লোকটা দিনরাত্রি খেটে মরছে। যতক্ষণ না বলতে পারছে ‘এইটে তোমারও ঘর’, ততক্ষণ তার যে কত দাহ, কত বন্ধন, কত ক্ষতি তার সীমা নেই— ততক্ষণ ঘরের কাজ করতে করতে তার অন্তরাত্মা কেঁদে গাইতে থাকে, ‘হরি, আমায় পার করো।’ যখনই সে আমার ঘরকে তোমারই ঘর করে তুলতে পারে তখনই সে