পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পার করো
৮১

ঘরের মধ্যে থেকে পার হয়ে যায়। আমার কর্ম মনে ক’রে আমি লোকটা রাত্রিদিন যখন হাঁসফাঁস করে বেড়ায় তখন সে কত আঘাত পায় আর কত আঘাত করে, তখনই তার গান ‘আমায় পার করো’— যখন সে বলতে পারে ‘তোমার কর্ম’, তখন সে পার হয়ে গেছে।

 আমার ঘরকে তোমার ঘর করব, আমার কর্মকে তোমার কর্ম করব, তবেই তো আমাতে তোমাতে মিল হবে। আমার ঘর ছেড়ে তোমার ঘরে যাব, আমার কর্ম ছেড়ে তোমার কর্মে যাব, এ কথা আমাদের প্রাণের কথা নয়। কেননা, এও যে বিচ্ছেদের কথা। যে আমির মধ্যে তুমি নেই, আর যে তুমির মধ্যে আমি নেই, দুইই আমার পক্ষে সমান।

 এইজন্যেই আমাদের ঘরের মাঝখানেই, আমাদের কাজকর্মের হাটের মধ্যেই দিনরাত রব উঠছে, ‘আমায় পার করো।’ এইখানেই সমুদ্র, এইখানেই পার।

 ১১ পৌষ

এ পার - ও পার

যার সঙ্গে আমার সামান্য পরিচয় আছে মাত্র সে আমার পাশে বসে থাকলেও তার আর আমার মাঝখানে একটি সমুদ্র পড়ে থাকে— সেটি হচ্ছে অচৈতন্যের সমুদ্র, ঔদাসীন্যের সমুদ্র। যদি কোনোদিন সেই লোক আমার প্রাণের বন্ধু হয়ে ওঠে তখনই সমুদ্র পার হয়ে যাই। তখন আকাশের ব্যবধান মিথ্যা হয়ে যায়, দেহের ব্যবধানও ব্যবধান থাকে না, এমন-কি, মৃত্যুর ব্যবধানও অন্তরাল রচনা করে না। যে অহংকার আমাদের পরস্পরের চারি দিকে পাঁচিল তুলে পরস্পরকে অতিনিকটেও দূর করে রাখে, সে যার জন্যে পথ ছেড়ে দেয় সেই আমাদের আপন হয়ে ওঠে।