পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
এ পার - ও পার
৮৩

হচ্ছেন ইহার পরম গতি। যিনি যার পরম গতি তিনি তার থেকে লেশমাত্র দূরে নেই। এতই কাছে যে তাঁকে ইনি বললেই হয়, তাঁর নাম করবারও দরকার নেই— ‘এই-যে ইনি’ বলা ছাড়া তাঁর আর কোনো পরিচয় দেবার প্রয়োজন হয় না। ইনিই হচ্ছেন ইহার সমস্তই। ইনি যে কে এবং ইহার যে কাহার সে আর বলাই হল না। সমুদ্রের এ পারে যে আছে সে তো ও পারের লোককে এষঃ বলে না, ইনি বলে না।

 ইনি হচ্ছেন ইহার পরমাগতি। আমরা যে চলি, আমাদের চালায় কে? আমরা মনে করি, টাকা আমাদের চালায়, খ্যাতি আমাদের চালায়, মানুষ আমাদের চালায়। যিনি পার হয়েছেন তিনি বলেন, ইনিই ইহার গতি— এঁর টানেই এ চলেছে— টাকার টান, খ্যাতির টান, মানুষের টান, সব টানের মধ্যে পরম টান হচ্ছে এঁর— সব টান যেতে পারে কিন্তু সে টান থেকেই যায়— কেননা সব যাওয়ার মধ্যেই তাঁর কাছে যাওয়ার তাগিদ রয়েছে। টাকাও বলে না ‘তুমি এইখানেই থেকে যাও’; খ্যাতিও বলে না, মানুষও বলে না— সবাই বলে ‘তুমি চলো’। তিনি পরমা গতি, তিনিই গতি দিচ্ছেন, আর-কেউ যে পথের মধ্যে বরাবরের মতো আটক করে রাখবে এমন সাধ্য আছে কার?

 আমরা হয়তো মনে করতে পারি, পৃথিবী যে আমাকে টানছে সেটা পৃথিবীরই টান। কিন্তু, তাই যদি হবে, পৃথিবীকে টানে কে? সূর্যকে কে আকর্ষণ করছে? এই-যে বিশ্বব্যাপী আকর্ষণের জোরে গ্রহতারানক্ষত্রকে ঘোরাচ্ছে, কাউকে নিশ্চল থাকতে দিচ্ছে না, সেই বিরাট কেন্দ্রাকর্ষণের কেন্দ্র তো পৃথিবীতে নেই। একটি পরমাগতি আছে, যা আমারও গতি, পৃথিবীরও গতি, সূর্যেরও গতি।

 এই পরমা গতির কথা স্মরণ করেই উপনিষৎ বলেছেন 'কোহ্যেবান্যাৎ কঃ প্রাণ্যাৎ যদেষ আকাশ আনন্দে। ন স্যাৎ’— কেই বা কোনো