পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দিন
৮৭

সমাজে যে-সকল প্রতিষ্ঠান আছে সে কেবল ঘরের উপযোগী, গ্রামের উপযোগী। ভূমার সঙ্গে যে সকল সংকীর্ণ প্রতিষ্ঠানের যোগ নেই সেখানে চিত্তসমুদ্রের জোয়ার এসে পৌঁছোয় না; এইজন্যে সেখানে মানুষ নিজের সত্য, নিজের গৌরব অনুভব করে শক্তিলাভ করতে পারে না, সে সর্বত্র পরাভূত হয়ে থাকে। তার দারিদ্র্যের অন্ত থাকে না।

 এইজন্যেই আমাদের সভ্যতার সাধনা করতে হবে, রেলওয়েটেলিগ্রাফের জন্যে নয়। কারণ, রেলওয়ে-টেলিগ্রাফেরও শেষ গম্যস্থান হচ্ছে মানুষ— কোনো স্থানীয় ইস্টেশন-বিশেষ নয়।

 এই সভ্যতা-সাধনার গোড়াকার কথাই হচ্ছে ধর্মবুদ্ধি। যতই আপনার প্রসার অল্প হয় ততই ধর্মবুদ্ধি অল্প হলেও চলে। নিজের ঘরে সংকীর্ণ জায়গায় যখন কাজ করি তখন ধর্মবুদ্ধি সংকীর্ণ হলেও বিশেষ ক্ষতি হয় না। কিন্তু, যেখানে বহু লোককে বহু বন্ধনে বাঁধতে হয় সেখানে ধর্মবুদ্ধি প্রবল হওয়া চাই। সেখানে ধৈর্য বীর্য অধ্যবসায় ত্যাগ সেবাপরতা লোকহিতৈষা সমস্তই খুব বড়ো রকমের না হলে নয়। বস্তু কোনোমতেই বৃহৎ হয়ে উঠতে পারে না যদি তাকে ধরে রাখবার উপযোগী ধর্মও বৃহৎ না হয়। ধর্ম যখনই দুর্বল হয় তখনই বৃহৎ সমাজ বিশ্লিষ্ট হয়ে ভেঙে চারি দিকে ছড়িয়ে পড়ে, কখনোই কেউ তাকে বাঁধতে পারে না।

 অতএব, যখনই বহুব্যাপারবিশিষ্ট বহুদূরব্যাপ্ত বহুশক্তিশালী কোনো সভ্যসমাজকে দেখব তখনই গোড়াতেই ধরে নিতে হবে তার ভিতরে একটি প্রবল ধর্মবুদ্ধি আছে— নইলে এত লোকে পরস্পরে বিশ্বাস, পরস্পরে যোগ, এক মুহূর্তও থাকতে পারে না।

 আমাদের দেশের সমাজেও সমস্ত ক্ষুদ্রতা বিচ্ছিন্নতা দূর করে জ্ঞানে প্রেমে কর্মে ভূমার প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে মানবাত্মা কখনোই বলিষ্ঠ এবং আনন্দিত হতে পারবে না। সাধারণের সঙ্গে প্রত্যেকের যোগ