পাতা:শিক্ষার বিকিরণ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিক্ষার বিকিরণ

স্বতই ছিল বিস্তৃত, সর্ব্বজনে মিলে আপনিই আপনার তৃষ্ণার জল জুগিয়েচে, রাজপরিষদের কোনো ব্যয়কুণ্ঠ আমলা-সেরেস্তায় জলের জন্যে মাথা খুঁড়তে হয়নি। তেমনি করেই সমাজ দেশের বিদ্যা আপনিই দেশময় বিতরণ করেচে। না যদি করত তবে সমস্ত দেশ আজ বর্ব্বরতায় কালো কর্কশ হয়ে উঠত। বিদ্যা তখন বিদ্বানের সম্পত্তি ছিল না সে ছিল সমস্ত সমাজের সম্পদ।

 যেখানে খবরের কাগজেরও পত্রমর্ম্মর শোনা যায় না এমন একটি সামান্য গ্রামে চাষীরা একদিন আমাকে নিমন্ত্রণ করেছিল। সেখানে প্রায় সকলেই মুসলমান। আমার অভ্যর্থনা উপলক্ষ্যে চলছিল একটা গানের পালা। চাঁদোয়ার তলায় কেরোসিন লণ্ঠন জ্বলচে, মাটির উপর ছেলে বুড়ো সকলেই বসে আছে স্তব্ধ হয়ে। যাত্রাগানের প্রধান বিষয়টা গুরুশিষ্যের মধ্যে তত্ত্বালোচনা,—দেহতত্ত্ব, সৃষ্টিতত্ত্ব, মুক্তিতত্ত্ব। থেকে থেকে তারি সঙ্গে নাচ গান কৌতুকের দ্রুতমুখরিত ঝঙ্কার। এই পালার একটি বিশেষ অংশ আজো আমার মনে আছে। কথাটা এই—যাত্রী প্রবেশ করতে চলেচে বৃন্দাবনে, পাহারাওয়ালা আটক করলে তার পথ, বললে, তুমি চোর, ভিতরে তোমাকে যেতে দেওয়া হবে না। যাত্রী বললে, সে কী কথা, কোথায় দেখলে আমার চোরাই মাল।