পাতা:শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত - মানদা দেবী.pdf/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৬
শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত

একখানি ছোট ঘর ভাড়া লইলাম। তাহার আশে পাশে আরও অনেক বাঙ্গালী স্ত্রীলোক বাস করিত, তাহাদের প্রায় সকলেই অধিক বয়সের বিধবা। আমি তাহাদিগকে বলিলাম, “মথুরায় থাকিতে আমার স্বামী ও শ্বাশুড়ীর কলেরায় মৃত্যু হইয়াছে। দেশে আত্মীয় স্বজনের নিকট চিঠি লিখিয়াছি।” সকলেই আমার জন্য দুঃখপ্রকাশ করিল।

 একমাস পরে আমি এই ঘর ছাড়িয়া কেশীঘাটের নিকট যাইয়া বাস করিতে লাগিলাম। হাতের সামান্য টাকা ফুরাইয়া আসিয়াছিল। ইতিমধ্যে একবার জ্বর হইয়া প্রায় দশদিন ভুগিয়াছিলাম। ভিক্ষা করিতে পারিলে আহারের অভাব হয় না, কিন্তু আমার শরীর এত দুর্ব্বল হইয়াছিল যে চলিতে পারিতাম না।

 দুইদিন কিছু খাই নাই। ভিক্ষা চাহিতে জানি না। বংশীবটের নিকট রাস্তার ধারে শুইয়া আছি। ভাবিতেছি, এখন মরণ আসিলেই বাঁচি। একজন বাঙ্গালী ভদ্রলোক যাইতেছিলেন, তিনি আমার দুরবস্থা দেখিয়া দয়ার্দ্র হৃদয়ে আমাকে সঙ্গে লইয়া গেলেন। ইনি এক সাধু মোহান্তের শিষ্য। মোহান্তজীর বৃহৎ আশ্রম— তাহাতে দেব-বিগ্রহ ও বহু শিষ্য-সেবকাদি রহিয়াছে। মোহান্তজী বাঙ্গালী। তাঁহার বয়স প্রায় ৬৫, মস্তকে জটা, আবক্ষলম্বিত দীর্ঘ শশ্রু—অঙ্গে চন্দন বিভূতি। তিনি আসনে বসিয়াছিলেন। আমাকে দেখিয়া শিষ্যকে বলিলেন “একে নিয়ে এসেছ কেন? এ যে অন্তঃস্বত্ত্বা। কোন দুষ্ট লোকের প্ররোচনায় পালিয়ে এসেছে, এখন সেই লোকটী সরে পড়েছে। এর অনেক কষ্টভোগ আছে। আচ্ছা, কিঞ্চিৎ ঠাকুরের প্রসাদ একে দাও।”