পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/১৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জীবনের শেষ দুই বৎসর
১৬৫

বিশ্বাস করেন, তবে দেখিবেন সেখানে লেখা আছে যে ঈশ্বর সর্বজনের প্রভু (বর্-উল-আলমীন), শুধু মুসলমানের প্রভু (বর-উল-মুসলমীন)। নহেন। বস্তুতঃ, ইসলাম ও হিন্দু ধর্ম্ম দুইটি পার্থকাব্যঞ্জক শব্দ মাত্র; যেন দুইটি ভিন্ন রং যাহা দিয়া স্বর্গবাসীচি একরবং ফলাইয়া মানবজাতির [নানাবর্ণে রঙ্গীন] চিত্রপট পূর্ণ করিয়াছেন।

 মসজিদে তাঁহাকে স্মরণ করিবার জন্যই আজান উচ্চারিত হয়। মন্দিবে তাঁহার অন্বেষণে হৃদয়ের ব্যাকুলতা প্রকাশ করিবার জন্যই ঘণ্টা বাজান হয়। অতএব, নিজের ধর্ম ও ক্রিয়াকাণ্ডের জন্য গোঁড়ামী করা ঈশ্বরের গ্রন্থের কথা বদল করিয়া দেওয়া ভিন্ন আর কিছুই নহে। চিত্রের উপর নূতন রেখা টানিলে আমরা দেখাই যে চিত্রকর ভুল। আঁকিয়াছিল।

 প্রকৃত ধর্ম্ম অনুসারে জজিয়া কোনমতেই ন্যায্য নহে। রাজনীতির দিক হইতে দেখিলে, জজিয়া শুধু সেই যুগেই ন্যায্য হইতে পারে যে-যুগে সুন্দরী স্ত্রীলোক স্বর্ণালঙ্কার পরিয়া নির্ভয়ে এক প্রদেশ হইতে অপর প্রদেশে নিরাপদে যাইতে পারে। কিন্তু, আজকাল আপনার বড় বড় নগর লুঠ হইতেছে, গ্রামের ত কথাই নাই। জজিয়া ত ন্যায়বিরুদ্ধ, তাহা ছাড়া ইহা ভারতে এক নূতন অত্যাচার ও ক্ষতিকারক।

 যদি আপনি মনে করেন যে প্রজাদের পীড়ন ও হিন্দুদের ভয়ে দমাইয়া রাখিলে আপনার ধার্মিকতা প্রমাণিত হইবে, তবে প্রথমে হিন্দুদের শীর্ষস্থানীয় মহারাণা রাজসিংহের নিকট হইতে জজিয়া আদায় করুন। তাহার পর আমার নিকট আদায় করা তত কঠিন হইবে না, কারণ আমি ত আপনার সেবার জন্য সদাই প্রস্তুত আছি। কিন্তু মাছি ও পিপীলিকাকে পীড়ন করা পৌরুষ নহে।

 বুঝিতে পারি না কেন আপনার কর্মচারীরা এমন অদ্ভুত প্রভূভক্ত যে