পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/২২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২০
শিবাজী

পরিশ্রমী ছিল, সাদাসিদে ভাবে সংসার চালাইত, তখন তাহাদের সমাজে একতা ছিল, জাত বা শ্রেণীর বিশেষ পার্থক্য বা বিবাদ ছিল না। কিন্তু শিবাজীর অনুগ্রহে রাজত্ব পাইয়া, বিদেশ-লুঠের অর্থে ধনবান হইয়া, তাহাদের মন হইতে সেই অত্যাচার-স্মৃতি এবং তাহাদের সমাজ হইতে সেই সরলতা ও একতা দূর হইল; সাহসের সঙ্গে সঙ্গে অহঙ্কার ও স্বার্থপরতা বাড়িল। ক্রমশঃ সমাজে জাতিভেদের বিবাদ উপস্থিত হইল।

 বহুদিন ধরিয়া অনুর্বর দরিদ্র মহারাষ্ট্র দেশের অনেক ব্রাহ্মণই শাস্ত্রচর্চা ও যজন-জন ত্যাগ করিয়া হিন্দু মুসলমান রাজসরকারে চাকরি লইয়া অর্থ ও প্রতিপত্তি ভোগ করিয়া আসিতেছিল। মারাঠা জাত, নিরক্ষর, অসি বা হলজীবী; কিন্তু কায়স্থগণ জাতিতেই “লেখক”, তাহারা লেখাপড়া করিয়া সরকারী চাকরি পাইতে লাগিল, ধনে মানে বাড়িতে লাগিল। ইহা দেখিয়া ব্রাহ্মণেরা হিংসায় জ্বলিতে লাগিল, কায়স্থগণকে শূদ্র ও অত্যজ বলিয়া ঘোষণা করিল। উপবীত গ্রহণের অপরাধে কায়স্থ (প্রভু") জাতের অকথ্য কুৎসা প্রচার করিল, তাহাদের নেতাদের একঘরে (গ্রামন্য) করিল।

 এমন কি শিবাজীর অভিষেকের সময়ই ব্রাহ্মণেরা একজোটে মারাঠা জাতের ক্ষত্রিয় অস্বীকার করিয়া, বৈদিক ক্রিয়া-কর্মে ও মন্ত্রপাঠ শিবাজীর কোন অধিকার নাই এই বলিয়া বসিল। তাহাদের এইরূপ অহঙ্কার ও গোঁড়ামিতে উত্ত্যক্ত হইয়া শিবাজী একবার (১৬৭৪ সালে) বলেন, “ব্রাহ্মণদের জাতিগত ব্যবসা শাস্ত্রচর্চা ও পূজা উপবাস ও দারিদ্র্যই তাহাদের ব্রত; শাসন-বিভাগে চাকরি করা তাহাদের পাপ। অতএব, সব রাহ্মণ মন্ত্রী ও আমলা, সেনাপতি ও দূতকে চাকরি হইতে মাইয়া দিয়া শাস্ত্রগত কাজে লাগাইয়া রাখা