পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/২২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২৪
শিবাজী

অধিকার দাবি করিত, তিনচার জন ভূস্বামী (যথা, দেশাই, দলবী, সাবত-তাহা ছাড়া দেশের রাজা) এবং পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ করিয়া অথবা বিদেশী আক্রমণকারীর পক্ষে যোগ দিয়া নিজ অধিকার স্থাপিত করিতে চেষ্টা করিত; স্বজাতীয় রাজারা দেশের বিচারালয় এই ব্যক্তিগত স্বার্থের সহায়ক না হইলে তৎক্ষণাৎ তাহাকে অগ্রাহ্য করিয়া দেশের শত্রুকে ডাকিয়া আনিত। ফলতঃ, “বতন” মারাঠা মাত্রেই প্রাণ ছিল, জন্মভূমি কিছুই না। “বতন” রক্ষা বা বৃদ্ধি করিবার জন্য মারাঠারা কোন পাপ করিতেই কুণ্ঠিত হইত না। নিজের জাত, বা শ্রেণীর অপেক্ষা কোন বৃহত্তর একতার বন্ধন সে যুগের হিন্দুরা কল্পনা করিতে পারিত না। নিজের বংশের বা জাতের স্বার্থ অপেক্ষা দেশের হিত যে বড় ও শ্রেয় তাহা রাজা-প্রজা উচ্চনীচ কেহই বুঝিত না, ভাবিত না। সকলেরই চেষ্টা নিজ ধন ও বল, মর্যাদা ও সামাজিক পদ বৃদ্ধি করা, তাহা স্বরাজেই হউক, আর পরাধীনতা স্বীকার করিয়াই হউক।

 এই অগণিত শোকসমূহ নিজের স্বার্থ অপেক্ষা কোন মহত্তর উদ্দেশ্য, নিজের ইচ্ছা অপেক্ষা কোন মহত্তর চালনা-শক্তি মানিত না। তাহারা, জীবনের শৃঙ্খলাকে সুখের অন্তরায় এবং নিয়ম-পালনকে দাসত্ব বলিয়া ভাবিত। যদি দেশে সকলেই নিজ নিজ খেয়াল দমন করিয়া এক সর্বব্যাপী বিধি ও সর্বোচ্চ কর্তাকে মানিয়া লয়, তবেই সে জাতি একতাবদ্ধ ও অজেয় শক্তিশালী হইতে পারে, সভ্যতার দ্রুত উন্নতি করিতে পারে। এই জন-সমষ্টির নিয়মানুবর্তিতা (ইংরাজীতে যাহাকে ‘ডিসিপ্লিন’ বা ‘রেন অব ল বলে) যে জাতির নাই তাহারা স্বাধীন হইতে পারে না-স্বেচ্ছাচারীহইয়া, অনাচার অরাজকতা করিয়া শেষে কোনও মহত্তর জাতির নিকট হীনতা-শ্রীকারে বাধ্য হয়, নিজেদের পরাধীনতার শুল নিজেরাই গড়ে। জগতের ইতিহাস যুগে যুগে এই সত্যই প্রচার