পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মুঘল ও বিজাপুরের সহিত প্রথম যুদ্ধ
৪৩

হইবে। তাহাই করা হইল। অবশেষে শিবাজী মিলনের শামিয়ানাতে প্রবেশ করিলেন। এই বস্ত্রগৃহে উভয় পক্ষেই চারিজন করিয়া লোক উপস্থিত ছিল—স্বয়ং নেতা, দুইজন শরীর-রক্ষক, এবং একজন ব্রাহ্মণ দূত। শিবাজী দেখিতে নিরস্ত্র, কিন্তু আফজল খাঁর কোমরে তলোয়ার ঝুলিতেছে।

 সঙ্গীরা সকলে নীচে দাঁড়াইয়া রহিল। শামিয়ানার মধ্যস্থলে যে বেদীর মত অল্প উঁচু স্থানে আফজল খাঁ বসিয়াছিলেন, শিবাজী তাহার উপর চড়িলেন। খাঁ গদী হইতে উঠিয়া কয়েক পা অগ্রসর হইয়া শিবাজীকে আলিঙ্গন করিবার জন্য বাহ বিস্তার করিয়া দিলেন। শিবাজী বেঁটে ও সরু, তিনি বিশালকায় আফজলের কাধ পর্য্যন্ত উচু। সুতরাং খাঁর বাহু দুটি শিবাজীর গলা ঘিরিল। তারপর হঠাৎ আফজল খাঁ শিবাজীর গলা নিজ বাম বাহু দিয়া লৌহবেষ্টনে চাপিয়া ধরিলেন, এবং ডান হাত দিয়া কোমর হইতে লম্বা সোজা ছোরা (যম্‌ধর) খুলিয়া শিবাজীর বাম পাঁজরে ঘা মারিলেন। কিন্তু অদৃশ্য বর্ম্মে বাধিয়া ছোরা দেহে প্রবেশ করিতে পারিল না। গলার চাপে শিবাজীর দমবন্ধ হইবার মত হইল। কিন্তু এক মুহুর্ত্তে বুদ্ধি স্থির করিয়া তিনি বাম বাহু সজোরে ঘুরাইয়া আফজল খাঁর পেটে বাঘনখ বসাইয়া দিয়া তাঁহার পাকস্থলীর পর্দ্দা বিদীর্ণ করিয়া দিলেন, খাঁর ভুঁড়ী বাহির হইয়া পড়িল। আর, ডান হাতে ‘বিছুয়া’ লইয়া খাঁর বাম পাঁজরে মারিলেন। যন্ত্রণায় আফজল খাঁর বাহবন্ধন শিথিল হইয়া আসিল; এই সুযোগে শিবাজী নিজেকে মুক্ত করিয়া বেদী হইতে লাফাইয়া পড়িয়া নিজ সঙ্গীদের দিকে ছুটিলেন। এসব ঘটনা এক নিমেষে শেষ হইল।

 ঘা খাইয়াই আফজল খাঁ চেঁচাইয়া উঠিলেন,—“মারিল, মারিল, আমাকে প্রতারণা করিয়া মারিল।” দুই দিক হইতে অনুচরগণ নিজ