পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মুঘল ও বিজাপুরের সহিত প্রথম যুদ্ধ
৪৫

শত্রু বধ করিয়া অগ্রসর হইতে লাগিল। তিন ঘণ্টার মধ্যে সব শেষ হইল। তিন হাজার বিজাপুরী সৈন্য মারা গেল। মাব্‌লেরা সামনে যাহা পাইল তাহারই উপর তরবারি চালাইতে লাগিল; পলাতক হাতীর লেজ কাটিয়া ফেলিল, দাঁত ভাঙ্গিয়া দিল,পা ঘাল্ করিল; উটকে কাটিয়া ভূমিশায়ী করিল। যে-সব বিজাপুরী সৈন্য পরাজয় স্বীকার করিয়া দাঁতে তৃণ থরিয়া ক্ষমা চাহিল, তাহাদের প্রাণদান করা হইল। এই যুদ্ধে শিবাজী লুঠ করিয়া বিশেষ লাভবান হইলেন। আফজল খাঁর সমস্ত তোপ, গোলাগুলি ও বারুদ, তাম্বু ও বিছানাপত্র, ধনরত্ন, মালসমেত ভারবাহী পশু তাঁহার হাতে পড়িল; ইহার মধ্যে ছিল পঁয়ষট্টিটা হাতী, চারি হাজার ঘোড়া, বারো শ’ উট, দু’হাজার কাপড়ের বস্তা, এবং নগদ ও গহনাতে দশ লক্ষ টাকা। বন্দীদের মধ্যে ছিলেন একজন উচ্চপদস্থ বিজাপুরী সর্দ্দার, আফজলের দুই শিশুপুত্র, এবং দুজন সাহায্যকারী মারাঠা জমিদার। যে-সব স্ত্রীলোক শিশু ব্রাহ্মণ এবং শিবিরের চাকর ধরা পড়িল, শিবাজী তৎক্ষণাৎ তাহাদের মুক্তি দিলেন। কিন্তু আফজলের স্ত্রীগণ ও জ্যেষ্ঠপত্র ফজল্ খাঁ, কয়না নদীর তীর বাহিয়া খণ্ডোজী খোপ্‌ড়ে ও তাহার মাব্‌লে সৈন্যের সহায়তায় নিরাপদ স্থানে পলাইয়া গেলেন।

 শিবাজী তাঁহার বিজয়ী সেনাদের একত্র করিয়া পরিদর্শন করিলেন। বন্দীদের অন্ন বস্ত্র ও অর্থ সাহায্য করিয়া নিজ নিজ স্থানে চলিয়া যাইতে দেওয়া হইল। যে-সব মারাঠা-সৈন্য যুদ্ধে প্রাণ দিয়াছিল, তাহাদের বিধবাদের পেন্‌সন দেওয়া হইল এবং বয়স্ক পুত্র থাকিলে তাহারা পিতার পদে নিযুক্ত হইল। আহত সৈনিকগণ জখমের অবস্থা অনুসারে একশত হইতে আটশত টাকা পুরস্কার পাইল, উচ্চ সৈনিক কর্ম্মচারীদিগকে হাতী, ঘোড়া, পোষাক ও মণিমুক্তা বক্‌শিশ দেওয়া হইল।

 মাৱাঠাদের এই প্রথম কীর্ত্তি এখানেই থামিল না। বিজয়ী শিবাজী