পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৮
শিবাজী

তিনি দড়ি বাহিয়া অন্দরের আঙ্গিনায় লাফাইয়া পড়িলেন; শত্রুরা অবিলম্বে তাঁহাকেও হত্যা করিল। এইরূপে শায়েস্তা খাঁর এক পুত্র, ছয়জন বাঁদী ও চল্লিশজন রক্ষী হত এবং নিজে, দুই পুত্র ও আটজন বাঁদী আহত হইল। মারাঠাদের পক্ষে শুধু ছয়জন লোক মারা যায় এবং চল্লিশজন জখম হয়।

 অতি অল্প সময়ের মধ্যেই এ-সব কাণ্ড ঘটিয়া গেল। এদিকে শিবাজী দেখিলেন, শত্রু এখন সজাগ—রণসজ্জা করিতেছে, তাঁহার আর বিলম্ব করা উচিত নয়। তিনি নিজ অনুচরদের একত্র করিয়া শিবির হইতে দ্রুত বাহির হইয়া পড়িলেন এবং যশোবন্তের তাঁবুগুলির পাশ দিয়া সোজা দক্ষিণে সিংহগড়ে চলিয়া গেলেন। মুঘলেরা তাঁহাকে ধরিবার জন্য সমস্ত শিবিরের মধ্যে অন্ধকারে এদিক-ওদিক বৃথা খুঁজিতে লাগিল। তাহারা স্বভাবতঃই ভাবিয়াছিল যে মারাঠারা সংখ্যায় অন্তত দশ-বিশ হাজার হইবে।

শায়েস্তা খাঁর দুঃখ ও শাস্তি

 ১৬৬৩ সালের ৫ই এপ্রিল তারিখে এই ঘটনা ঘটে। পরদিন প্রাতে সমস্ত মুঘল-কর্ম্মচারীরা সেনাপতির শোকে সমবেদনা জানাইবার জন্য তাঁহার দরবারে উপস্থিত হইলেন। ইঁহাদের মধ্যে যশোবন্ত সিংহ ছিলেন, তাঁহার অধীনে দশ হাজার সৈন্য এবং তাঁহার শিবির শিবাজীর পথে, অথচ তিনি শত্রুর আসা-যাওয়ার সময় কোন বাধাই দেন নাই এবং পশ্চাদ্ধাবনও করেন নাই। তাঁহার কপট দুঃখের কথাগুলি শুনিয়া শায়েস্তা খাঁ বলিলেন, “আঁ। আপনি বাঁচিয়া আছেন দেখিতেহি। কাল রাত্রে যখন শত্রু আমাকে আক্রমণ করে, আমি ভাবিয়াছিলাম আপনি তাহাদের বাধা দিতে গিয়া প্রাণ হারাইয়াছেন, তবেই ত তাহারা আমার কাছে পৌঁছিতে পারিয়াছে।”