পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পাঁচ বৎসর ধরিয়া যুদ্ধ, ১৬৬০-৬৪
৬৫

এবং কতক লোকের প্রাণ পর্য্যন্ত লওয়া হইল। “মিষ্টার এণ্টনি স্মিথ (ইংরাজ-বণিক) স্বচক্ষে দেখিলেন যে, শিবাজীর শিবিরে একদিনে ছাব্বিশজনের মাথা এবং ত্রিশজনের হাত কাটিয়া ফেলা হইল; বন্দীদের যে-কেহ যথেষ্ট টাকা দিতে পারিল না তাহার অঙ্গহানি বা প্রাণবধের আজ্ঞা হইল। শিবাজীর লুঠের প্রণালী এইরূপ, প্রত্যেক বাড়ী হইতে যাহা সম্ভব লইয়া, গৃহস্বামীকে বলা হইল যে যদি বাড়ী বাঁচাইতে চাও ত তাহার জন্য আরও কিছু দাও। কিন্তু যে-মুহূর্ত্তে সেই টাকা আদায় হইল, অমনি নিজ প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করিয়া ঘরগুলি পুড়াইয়া দিলেন।” [সুরত কুঠীয় পত্র] একজন বুড়া বণিক আগ্রা হইতে চল্লিশটি বলদ বোঝাই করিয়া কাপড় আনিয়াছিল, কিন্তু তাহা বিক্রয় না হওয়ায়, নগদ টাকা দিতে না পারিয়া সে ঐ সমস্ত মাল শিবাজীকে দিতে চাহিল; তবুও তাহার ডান হাত কাটিয়া তাহার কাপড়গুলি পুড়াইয়া তাহাকে তাড়াইয়া দেওয়া হইল। অথচ একজন ইহুদী মণি-বিক্রেতা বেশ বাঁচিয়া গেল; সে আমার কিছু নাই বলিয়া কাঁদিতে লাগিল; মারাঠারাও ছাড়িবে না, তাহাকে বধ করিবার হুকুম হইল; তিন তিনবার তরবারি তাহার মাথার চারিদিকে ঘুরাইয়া ঘাড়ে ছোঁয়ান হইল, কিন্তু সে কিছুই দিতে না পারিয়া যেন মৃত্যুর অপেক্ষায় বসিয়া আছে এরূপ ভাণ করিল; অবশেষে আশা নাই দেখিয়া শিবাজী তাহাকে ছাড়িয়া দিলেন। ইংরাজকুঠীর কর্ম্মচারী এণ্টনি স্মিথ ডচ্ ঘাটে নামমাত্র বন্দী হইয়া তিন দিন শিবাজীর শিবিরে আবদ্ধ ছিলেন; অন্যান্য বন্দীর সহিত তাঁহার ডান হাত কাটার হুকুম হইল; কিন্তু তিনি উর্দ্দু ভাষায় চেঁচাইয়া শিবাজীকে বলিলেন, “কাটিতে হয় আমার মাথা কাট, হাত কাটিও না।” তখন মারাঠারা তাঁহার মাথায় টুপী খুলিয়া দেখিল যে, তিনি ইংরাজ; দণ্ডাজ্ঞা রদ হইল। পরে তিনশত পঞ্চাশ টাকা দিয়া তিনি মুক্ত