পণ্ডিতগণ নিমন্ত্রিত হইয়া আসেন। যজ্ঞে বহু টাকা খরচ হয় এবং ব্রাহ্মণদিগকে প্রচুর দক্ষিণা দেওয়া হয়। যজ্ঞের শেষে রাজর্ষি জনক এক হাজার গরু একত্র করিয়া বাধিলেন এবং ইছাদের প্রত্যেকটির শিংয়ে দশ পাদ করিয়া সোনা বাধিয়া দিলেন। তারপর সমবেত পণ্ডিতদিগকে লক্ষ্য করিয়া তিনি কহিলেন, *আপনাদের মধ্যে যিনি সকলের চেয়ে বড় পণ্ডিত, তিনি এই গরুগুলি লইতে পারেন।” ব্রাহ্মণদের মধে কেই সাহস করিয়া গরু লইতে অগ্রসর হইতে পারিলেন না ; তখন যাজ্ঞবল্কা তাহার শিষ্ণুদিগকে ডাকিয়া কহিলেন, “এই গরুগুলি বাড়ী লইয়া যাও ।” এই সব ব্রাহ্মণদের ভিতরে যাজ্ঞবল্কা নিজেকে সকলের চেয়ে বড় বিদ্বান মনে করেন, এই দেখিয়। উপস্থিত সকলেই তাহার উপর অত্যন্ত চটিয়া গেলেন এবং যাজ্ঞবল্কাকে বিচারে জাহবান করিলেন। এক জনের পর আর একজন তাহাকে প্রশ্নজালে জর্জরিত করিয়া তুলিলেন ! অনেক দার্শনিক প্রশ্নের আলোচনা সেখানে হইল । একজন জিজ্ঞাসা করিলেন, “মৃত্যুর দ্বারা সমস্ত আচ্ছন্ন হইয়া আছে ; যজমান এই মৃত্যু হইতে মুক্তি পাইতে পারে কি প্রকারে ?” আর একজন প্রশ্ন করিলেন, “যজ্ঞ করিয়া যজমান যে স্বর্গে যায়, তাহার প্রণালীটি কি ? তৃতীয় ব্যক্তি প্রশ্ন করিলেন, “যজ্ঞবিশেষে কতটি মন্ত্র কে কে উচ্চারণ করিবেন, সেই সম্বন্ধে।” আর একজন পশ্ন করিলেন, "মানুষ যখন মরে, তখন তাহার প্রাণ কি উপর দিকে উঠিয়া যায় ।” আবার একজন জিজ্ঞাসা করিলেন। "মানুষ মরিয়া গেলেও তাহাকে ত্যাগ করে না, এমন কি কিছু আছে ?’ অপর এক প্রশ্ন হইল, "অশ্বমেধ সজ্ঞ যাহার করে তাহদের কি ফললাভ হয় ?” এইরূপ বহু প্রশ্নের উত্তর যাজ্ঞবল্কা দিলেন । কিন্তু ইহাতেও সমবেত জনতা তৃপ্ত হইল না। জনতার ভিতরে অনেক বিছৰী মহিলাও ছিলেন ; অত:পর তাহারাও যাজ্ঞবল্কোর উপর প্রশ্নবাণ করিতে লাগিলেন । গাগী বাচক্লবী বলিয়া একজন মহিলা ছিলেন । তিনি প্রশ্ন করিলেন, “যাজ্ঞবল্কা, এই জগৎ জলেতেওতপ্ৰেতভাবে আছে বলিয়া শোনা যায়, কিন্তু এই জল আছে কোথায় ? যাজ্ঞবল্কা কহিলেন, “বায়ুতে ” “বায়ুর আশ্রয় কি ?” “অন্তরীক্ষ” । আবার প্রশ্ন ছচল, “অন্তরীক্ষের আশ্রয় কি ?” ধাজ্ঞবল্ক, তাছারও উত্তর দিলেন এবং সমস্তের আশ্রর ব্ৰহ্মলোক,ইছাই কহিলেন। ՖՀ>(t --- ইহার পরেও গাগী প্রশ্ন করিলেন, “ব্রহ্মলোকের আশ্রয় fক ?” এইবার মাঙ্কবন্ধ চটিয়া গিয়া উত্তর করিলেন, । ".বশী জানিতে চাষ্টিবেন না, গাগী , তাহাতে বিপদ আছে।” অত:পর গার্গ চুপ করিলেন । গাগী থামিলেন বটে, কিন্তু প্রশ্ন থামিল না । ইহার পরেও এক জনের পর অার এক জন নানা প্রকার । প্রশ্নে যাজ্ঞবল্কাকে ব্যতিব্যস্ত করিয়া তুলিলেন । এক জন প্রশ্ন তুলিলেন, “জগতের অস্তয়ামী কে ?” ইহাব অতি সুন্দর উত্তর যাজ্ঞবল্কা দিলেন। “যিনি পৃথিবীতে আছেন "অথচ পৃথিবী হতে ভিন্ন যাহাকে পৃথিবী জানিতে পারে না, অথচ পৃথিবী যাহার দেই, এবং ভিন্ন হইয়ু ও যিনি ভিতর হইতে পৃথিবীকে পরিচালনা করেন, সেই যে তোমার আত্মা, তিনিই অমর অন্তৰ্য্যামী । এই রূপে ষিনি অগ্নিতে, অন্তরীক্ষে, বায়ুতে, আকাশে, স্থৰ্য্যে, চারিদিকে, চন্দ্র তারকায়, অন্ধকারে, আলোতে,—এক কথায় সৰ্ব্বত্র সব জিনিষে থাকিয়া ও সব জিনিষ হইতে পৃথক এবং সব জিনিষ যাহার দেহ-স্বরূপ এবং সব জিনিষকে যিনি নিয়ন্ত্রিত করিতেছেন, তিনিই অন্তর্যামী আত্মা। ধিনি বাকো আছেন, শ্রবণে আছেন, চক্ষুতে অাছেন, মনে আছেন, —যাহাকে দেখা যায় না, অথচ যিনি দেখেন, যাহাকে শোনা যায় না, অথচ’যিনি শোনেন, র্যাখাকে জানা যায় ন, অথচ নিনি সব জানেন, যাহার উপরে দ্রষ্টা, শ্রোতা, বিজ্ঞাত নাই,—তিনিই আন্তর্যামী আত্মা ।” এইরূপ প্রশ্নোত্তর আরও কিছুক্ষণ চলে। কিন্তু ইছর পরে একটা দুর্ঘটনা ঘটে। শাকল নামক একজন ব্রাহ্মণের সঙ্গে ধাজ্ঞবল্কোর পূল্পের শত্রতা ছিল বলিয়া মনে হয় । এই শাকলা এইবার প্রশ্ন করিতে অগ্রসর হন। অনেকক্ষণ বাদ মুলাদ চলে। তার পর শাকলা এক প্রশ্ন করিয়াই বলেন, “যদি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে ন পারেন, তবে আপনার মাপ খসিয়া পড়ে যেন !” যজ্ঞে বান্ধ্য তাছাতেই সন্মত হইলেন এবং প্রশ্নের উত্তর দিলেন । কিন্তু সে উত্তর শাকলোর মাথায় চুকিল না, সুতরাং তাছার মাথা খসিয়া পড়িল এবং সেইখানেই তাছার মৃত্যু হইল । তাছার শিষ্যেরা তাছার হাড় কয়খান। লইয়া পলাইয়। গেল। এই ব্যাপারটা কি, ভালবোঝা যায় না; কৃষ্ণ যেমন যুধিষ্ঠিরের রাজস্থয় যজ্ঞে ঝগড়া করিয়া শিশুপালকে মারিয়া ফেলিয়াছিলেন, সেইরূপ একটা কিছু কইয়া থাকিবে । যাহা হউক, এর পর আর কেহ যাজ্ঞবল্কাকে প্রশ্ন করিতে সাহস পাছলেন না । যাজ্ঞবল্ক্যের জয় স্বীকৃত হইল ।
পাতা:শিশু-ভারতী - চতুর্থ খণ্ড.djvu/১১৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/d/d5/%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%81-%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%80_-_%E0%A6%9A%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A5_%E0%A6%96%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1.djvu/page114-1024px-%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%81-%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%80_-_%E0%A6%9A%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A5_%E0%A6%96%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1.djvu.jpg)