পাতা:শিশু-ভারতী - ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/১৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিশু-ভারতী অতটুকু ছেলের সাহস দেখিয়া সেই লোকটার চোখ একেবারে কপালে উঠিবার জোগাড় হইল । লে যেন তাহার নিজের কানকে বিশ্বাস করিতে পারিতেছিল না। সেইজষ্ঠ একবার জিজ্ঞাসা করিল, “কি বলিস ?” অলিভার বলিল, “আমি আর একটু খাবার চাই।” লোকটী রাগে অগ্নিমূৰ্ত্তি হইয়া পরিবেশন করিবার হাতাটা দিয়া অলিভারের ঘাডে কযিয়া এক খা বসাইয়া দিল । তারপল দৌড়াইযা গিয়া অনাথ-আশ্রমের কৰ্ত্তাদের কাছে জানাইল—“অলিভারের এমনি স্পন্ধা যে, তাহাকে যাহা খাইতে দেওয়া হয়, তাহাতে সে সন্তুষ্ট নছে —আবার আসে প্রতিবাদ করিতে।” ইহাতে অনাথ-আশ্রমের কৰ্ত্তারাও খুব আশ্চৰ্য্যান্বিত হইলেন এবং বলিলেন, “এত সাহস ঐটুকু ছেলেব! তোমরা দেখিয লইও ও ছেলে নিশ্চয়ই ফাসি কাঠে ঝুলিবে ।” অনেক কথাবাৰ্ত্তার পর তাহাবা ঠিক করিলেন যে, অলিভারকে আর সেখানে রাখা যাইতে পারে না। কারণ ও সেখানে থাকিলে অন্য সব ছেলেরা উহার দৃষ্টাস্তে খারাপ হইয়া যাইবে। সেইজন্য একটা পুরস্কার ঘোষণা করা হইল যে, যদি কেহ অলিভারকে গ্রহণ কবে, তবে সে পাচ পাউণ্ড পুরস্কার পাইবে। একজন কবরখানার লোক তাহার ব্যবসায় শিখাইবাব জঙ্গ অলিভারকে লইয়া গেল। সে লোকটাব নাম ছিল মোবেরি । অলিন্ডারের লণ্ডন-যাত্রা অলিভার ভাবিয়াছিল যে, সে যখন অনাথআশ্রম হইতে রেহাই পাইল, তখন তাহার বরাত নিশ্চয়ই ফিরিবে । কিন্তু কোথায় কি ? মিসেস স্নেবেরি অলিভারের প্রতি এমনই নির্দয ব্যবহার করিতেন যে, সে সেখানেও অতিষ্ঠ হইয়া উঠিল। সেইজন্য একদিন খুব ভোবে উঠিয সে স্লোবেরিব বাড়ী হইতে পলাইয়া গেল। পথে বাহির হইয়া সে ঠিক করিল, সে লণ্ডনে যাইবে। কারণ সে শুনিয়াছিল, লণ্ডন না কি মস্ত বড় শহর। স্বতরাং অত বড় শহরে গিয়া ভীডের মধ্যে মিশিয়া গেলে সেই অনাথ আশ্রমের নিষ্ঠুর লোকের অাব তাছাকে খুজিয়া পাইবে না, আর সেখানে গিয় তাহার একটা-না-একট। গতি হইবে নিশ্চযই। কিছুদূর অগ্রসর হইয। গিয়া একটা মাইল ষ্টোন দেখিয়া অলিভার বুঝিল যে, লণ্ডন সেখান হইতে সত্তর মাইল দূরে। তবু সে স্থির করিল যে, সে সত্তর মাইল ইটিতে গিয়। যদি তাহার মৃত্যু হয়, সেও ভাল, কিন্তু কিছুতেই সে আর অনাথ-আশ্রমের লোকগুলির নিষ্ঠুর কবলে ধরা দিবে না। দিন সাতেক অনবরত হাটিয়া একদিন সকালে অলিভাব টুইষ্ট খোড়াইতে খোড়াইতে একটা ছোট শহরে উপস্থিত হইল। লণ্ডন তখনও কিছু দূরে। পথ চলিয়া চলিয়। তাছার প। কাটিা দরূদর করিয়া রক্ত পডিয়াছিল—কন কনে শীতে তাহাব রক্ত প্রায় জমিয়া যাইবাব জোগাভ হইয়াছিল। তাছার উপর ক্ষুধার জালায় সে একেবারে অস্থির হইয়া উঠিয়াছিল। সঙ্গে তাহার একটও পয়সা ছিল না যে, সে কিছু কিনিয়া খাইবে। সেইজন্ত পথে একবার ভিক্ষা করিবার চেষ্টা কবিয়ছিল। কিন্তু একটা লোক ভিক্ষা দিৰে বলিযা লোভ দেখাইয় অলিভারকে অনেকক্ষণ ধরিয়া তাহার গাড়ীর পিছনে পিছনে দৌড়াইতে বাধা করাইয। তারপর ফাকি দিয়া সরিয়া পডিয়াছিল। এই সব নানা কারণে সে এত ক্লাস্ত হইঘাছিল যে, টশিতে টলিতে গিয়া একটা বাড়ীর দরজার সাম্নে চেলান দিয়া বসিয়া বসিয়া ঝিমাইতে লাগিল। হঠাৎ একজনের ডাকে সে চম্কাইয়া উঠিয়া চাহিয়া দেখিল যে, প্রায তাছারই সমবয়সী একটী ছেলে তাহাকে ডাকিতেছে। অলিভার সে ছেলেটার অদ্ভুত বেশভূষা দেখিয়া একটু অবাকৃ হইল। সে দেখিল— সেই ছেলেটার জামাকাপড় বেশ ময়লা, আর এমন চিলা একটা কোট পরিয়াছে যে, উছা তাহার প্রায় গোড়ালি পর্যাস্ত নামিয়াছে। যাহা হউক, সেই ছেলেটা অলিভারকে ডাকিয়া তুলিলা বলিল—“তোমাকে দেখিয়া ক্ষুধাৰ্ত্ত বোধ হইতেছে। তুমি কি খাবার খাইবে ? তাহা হইলে আমাব সঙ্গে আইস।” সেই ছেলেটার স্নেহের ডাকে ক্লান্ত অলিভার টুইষ্ট আনন্দে একেবারে গলিয়া গেল। ছেলেটা সত্যসত্যই অলিভারকে একটা ছোট হোটেলে লইয়া গিয়া বেশ পেট ভরিয়া খাওয়াইল। তাহার পরে জিজ্ঞাসা করিয়া জানিল যে, অলিভার লণ্ডনে যাইবে। তখন জিজ্ঞাসা করিল, “সেখানে তোমার থাকিবার জায়গা আছে ?” অলিভার উত্তর দিল, “না।” ছেলেটা আবার বলিল, “তোমার সঙ্গে তাহ হইলে টাকাকড়ি আছে তো ?” অলিভার বলিল, “না, একট পয়সাও আমার হাতে নাই।” এই কথা বলিয়া অলিভার টুইষ্ট একে ૨૪૨8