রকম হবে, তার চাল-চলন ধরণ-ধারণ কি রকম হবে, কি রকমে লে জীবনযাত্রা নিৰ্ব্বাহ করবে, সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে তাৰ আবেষ্টনের উপর। স্বারা ডাঙ্গায় চলা-ফেরা করে তাদের যেমন পায়ের প্রয়োজন, তেমনই আবার যারা আসমানে উড়ে বেড়ায় তাদের ডানার দরকার । তেমনই আবার যারা জলে সাঁতরে বেড়ায় তাদের হাসের মতন পা কি মাছের মতন লেজ ও পাখনার প্রয়োজন। কাজেই সাগর-গর্ভের জলজ-প্রাণীরা কি বকম আবেষ্টনের মাঝে জন্ম নেয় ও জীবন কাটায়, সেটার বিষয়ে তোমাদের স্পষ্ট ধারণা থাকা চাই। তাদের জলে মুন আছে, অক্সিজেন আছে, কাৰ্ব্বনিক এ্যাসিড আছে, একথা তোমরা শিখেছ। কিন্তু এই জল সম্বন্ধে আরও অনেক কথা তোমাদের জানা চাই ; কেন না ভেবে দেখ, শুধু অক্সিজেন ও কাৰ্ব্বনি ক এ্যাসিড বাষ্প থাকলেই যে জীবের প্রাণ বঁাচতে পারে, তা ত নয়। তার জীবনধারণের জন্য অল্প বিস্তর আলোরও দবকার । সাগরের অতল গর্ভে কতদূর আলো পৌছায়, তার উপর নির্ভর করছে কত নীচে অবধি জীবজন্তু গাছগাছড়া দেখতে পাওয়া যাবে। তাই তোমাদের জানা দরকার হবে মহাসমুদ্র কোন জায়গায় কত গভীর, আর সেই গভীরতা কি উপায়ে, কি যন্ত্রের সাহায্যে মাপা যায়। তার পর, এ কথাও তোমাদের লক্ষ্য করতে হবে যে সমুদ্রের জলের কোথায় কত উত্তাপ, কোথায় কতখানা চাপ, জল স্থির কি চঞ্চল। এ কথা কেন বলছি, একটু বুঝিয়ে দিতে চেষ্টা করবো । মেরুপ্রদেশের তুষ" শীতল জলে যে রকম জীব বা উদ্ভিদ দেখতে পাবে, বিষুবরেখার উত্তপ্ত জলে তা ত পাবে না ! এ তফাৎ স্থলচর জীবদের মধ্যেও দেখতে পাৰে। উষ্ণ প্রদেশের ভালুক কি হরিণ এক রকমের হয়, অতি-শীতল প্রদেশের of;q (Reindeer) &l stoo ( Polar Bear) আবার অন্ত প্রকারের হয়। গরম সমতল দেশের চিতাবাঘ এক রকমের হয়, আবার উচু পাহাড়ের MIWI först (Snow-Leopard) ata ao রকমের হয়। আবার প্রাণীর দেহের উপর কতটা চাপ বা ভার পড়ছে, তার উপর নির্ভর করে তার দেহের গঠন কেননা, ততটা চাপ সইতে পারে এমনতর শক্ত তার খোলসটা হওয়া চাই ত ! সাগরের গভীর জলে এরকম অনেক জীব আছে, যাদিকে বাহিরে আনলেই তাদের দেহ তৎক্ষণাৎ ফেটে যায়, আর তারা মরে যায়। এই যে আমরা ডাঙ্গার প্রাণী, মানুষ, আমাদেরও নিয়ত কতথানা চাপ সহ করতে হয় তা কি তোমরা জান ? আমরা ত সত্যি কিছু শূন্তে চলাফের করছি না। আমরাও বাস করি এক মহাসমুদ্রের তলায় । তবে সে বা র-সমুদ্র নয়, বায়ু সমুদ্র । পৃথিবীকে চারিদিকে ঘিরে আছে যে পচিশ ক্রোশ পুরু বায়ুমণ্ডল, তারই ওজন আমাদের শরীরের প্রত্যেক অঙ্গের উপর সর্বক্ষণ চেপে রয়েছে । দমকল লাগিয়ে কোন অঙ্গের উপরকার হাওয়াটা চুষে নিলে সে অঙ্গ তৎক্ষণাৎ ফুলে উঠবে, চামড়া ফেটে বক্ত বেরোতে থাকৰে। বায়ুমণ্ডলের এক নিয়ম যে যত উপরে যাবে হাওয়া তত পাতল হবে আর ওজন তত কমবে। ফলে খুব তাড়াতাড়ি যদি তুমি কোন উচু পাহাড়ে চড়ে যাও ত তোমার গা ফেটে রক্ত পড়বে, নি:শ্বাস লিতে কষ্ট হবে, নানারকম অস্বস্তি বোধ করবে। বায়ুর মতন হালকা জিনিসের চাপেই যখন এতটা তফাৎ হব, তখন জলের চাপ সহ কববার জন্ত দেহ কতটা শক্ত হওয়া চাই তা সহজেই অনুমান করতে পার । তোমাদের মধ্যে যদি কেউ গভীর জলে ডুৰ দিয়ে থাক তা ছলে লক্ষ্য করে থাকবে যে তলার কাছে জল কি রকম চারিদিক থেকে চেপে ধরে। অতএব বুঝতে পারছ যে সমুদ্রের জীব বা গাছগাছড়াকে ভাল কবে চিনতে জানতে হলে সমুদ্রগর্ভের অবস্থা সম্বন্ধে একটা পরিষ্কার ধারণা থাক। চাই ! এখন বল দেখি, মহাসাগর বললেই নোন জল ছাড়া আর কি কথা সহজেই মনে আসে ! ইংরেজ কবি বায়রণ সমুদ্রের বর্ণনা করিতে গিয়ে প্রথমেই লিখেছেন:– "Roll on, thou deep and dark blue Ocean, roll.”—আমাদের বাঙ্গলার কবি গেয়েছেন, “ঘুমন্ত পৃথ্বীরে • • তরঙ্গবন্ধনে বাধি, নীলাম্বর অঞ্চলে তোমার সযত্নে বেষ্টিয়া ধবি. আর এক কবি লিখেছেন :– "সিন্ধুপারে গর্জে ঢেউ দগুমাত্র নয়ুকো স্থির, নীচে পড়ে আছে অগাধ স্তন্ধ শাস্ত সিন্ধুনীর।” ૨૨૨૦
পাতা:শিশু-ভারতী - ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৩৪৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।