পাতা:শুভদা - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শুভদ ܀ বন্য জীবজন্তু ছুটিয়া আসিয়া সেই বৃক্ষতলে আশ্রয় লইতে আসিতেছে, আবার তৎক্ষণাৎ মনুষ্যমূৰ্ত্তি দেখিয়া ভয়ে চিৎকার ছাড়িয়া পলাইয়া যাইতেছে। শুভদার সহসা মনে হইল যদি চোর ডাকাইত কেহ আশ্রয় লাইতে এইখানেই আসিয়া পড়ে ? তাহা হইলে ? তাহার প্রাণের ভয় হইল না। কিন্তু তদপেক্ষা মূল্যবান বালা দুখানির জন্য ভয় হইল। স্বামীর নিস্কৃতির কারণ, নিজের আশা ভরসা সমস্তই এই বালা দুগাছি। সত্ৰাসে শুভদা বৃক্ষতল ছাড়িয়া পলায়ন করিল । সমস্ত শরীর কর্দমসিক্ত হইয়াছে, গাছপালার আঁচড়ে ও কণ্টকে সৰ্ব্বাঙ্গ ক্ষতবিক্ষত হইয়াছে, তথাপি শুভদ পথ বহিয়া চলিতে লাগিল। এক নিমিষের তরে বৃষ্টির উপশম নাই। এক মুহুৰ্ত্তের জন্য মেঘের শব্দের বিরাম নাই, কোন মুখে কোথায় চলিয়াছে তাহার স্থিরতা নাই। তথাপি বনবাদাড় সরাইতে সরাইতে অগ্রসর হইতে লাগিল। অনেকক্ষণ পরে বোধ হইল যেন অপেক্ষাকৃত প্রশস্ত পথ সম্মুখে দেখা যাইতেছে। দ্বিগুণ উৎসাহে হঁটিয়া আসিয়া শুভদ। দেখিল যথার্থই পাকা পথ পাইয়াছে। এখন কিন্তু অন্য কথা । যখন পথ পায় নাই তখন কেবল পথের ভাবনাই ভাবিয়াছিল, এখন কাজের কথা মনে হহঁতে লাগিল। এত রাত্রে কি করিয়া দেখা হইবে, দেখা হইলেই কি কাৰ্য্যসিদ্ধি হইবে ? সিদ্ধ হউক আর না হউক। এ দুৰ্য্যোগে বাটই বা কেমন করিয়া ফিরিয়া যাইব । ক্রমে গ্রামের ভিতর প্রবেশ করিল ; কিছুদূর আসিয়াই প্ৰকাণ্ড অট্টালিকা ও চতুর্দিক সংলগ্ন রেলিং দেওয়া বাগান দেখিয়া বুঝিতে পারিল ইহাই নন্দীদের বাটী, কিন্তু কেমন করিয়া প্ৰবেশ করিবে ? আর প্রবেশ করিলেই বা তঁহার সহিত এত রাত্রে কি করিয়া সাক্ষাৎ করিবে। শুভদার কান্না আসিল ; এখন কি হইবে ? কি করিয়া বাড়ি যাইবে ? পরিশ্রমে, অনাহারে, দুর্ভাবনায় সে মৃতপ্ৰায় হইয়া পড়িয়াছিল, নন্দীদের বাটীর সম্মুখে যে শিবমন্দির ছিল তাহারই বারান্দার