পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শিলঙ থেকে আমিই নাহয় চললুম, কিন্তু পাঁজি থেকে অঘ্রান মাস তো ফস করে পালাবে না। কোলকাতায় গিয়ে কী করব জান?’

 ‘কী করবে।’

 ‘মাসিমা যতক্ষণ করবেন বিয়ের দিনের ব্যবস্থা ততক্ষণ আমাকে করতে হবে তার পরের দিনগুলোর আয়োজন। লোকে ভুলে যায় দাম্পত্যটা একটা আর্ট, প্রতিদিন ওকে নূতন করে সৃষ্টি করা চাই। মনে আছে বন্যা, রঘুবংশে অজ-মহারাজা ইন্দুমতীর কী বর্ণনা করেছিলেন?’

 লাবণ্য বললে, ‘প্রিয়শিষ্যা ললিতে কলাবিধৌ।’

 অমিত বললে, ‘সেই ললিতকলাবিধিটা দাম্পত্যেরই। অধিকাংশ বর্বর বিয়েটাকেই মনে করে মিলন, সেইজন্যে তার পর থেকে মিলনটাকে এত অবহেলা।’

 ‘মিলনের আর্ট‌্ তোমার মনে কিরকম আছে বুঝিয়ে দাও। যদি আমাকে শিষ্যা করতে চাও আজই তার প্রথম পাঠ শুরু হোক।’

 ‘আচ্ছা, তবে শোনো। ইচ্ছাকৃত বাধা দিয়েই কবি ছন্দের সৃষ্টি করে। মিলনকেও সুন্দর করতে হয় ইচ্ছাকৃত বাধায়। চাইলেই পাওয়া যায়, দামি জিনিসকে এত সস্তা করা নিজেকেই ঠকানো। কেননা, শক্ত করে দাম দেওয়ার আনন্দটা বড় কম নয়।’

 ‘দামের হিসাবটা শুনি।’

 ‘রোসো, তার আগে আমার মনে যে ছবিটা আছে বলি।

১১০