পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নূতন পরিচয়

অমিত মিশুক মানুষ। প্রকৃতির সৌন্দর্য নিয়ে তার বেশিক্ষণ চলে না। সর্বদাই নিজে বকাঝকা করা অভ্যাস; গাছপালা পাহাড়পর্বতের সঙ্গে হাসিতামাসা চলে না, তাদের সঙ্গে কোনোরকম উল্টো ব্যবহার করতে গেলেই ঘা খেয়ে মরতে হয়— তারাও চলে নিয়মে, অন্যের ব্যবহারেও তারা নিয়ম প্রত্যাশা করে— এক কথায়, তারা অরসিক, সেইজন্যে শহরের বাইরে ওর প্রাণ হাঁপিয়ে ওঠে।

 কিন্তু হঠাৎ কী হল, শিলঙ পাহাড়টা চার দিক থেকে অমিতকে নিজের মধ্যে যেন রসিয়ে নচ্ছে। আজ সে উঠেছে সূর্য ওঠবার আগেই; এটা ওর স্বধর্মবিরুদ্ধ। জানলা দিয়ে দেখলে, দেবদারু গাছের ঝালরগুলো কাঁপছে, আর তার পিছনে পাতলা মেঘের উপর পাহাড়ের ও পার থেকে সূর্য তার তূলির লম্বা লম্বা সোনালি টান লাগিয়েছে— আগুনে-জ্বলা যে-সব রঙের আভা ফুটে উঠেছে তার সম্বন্ধে চুপ করে থাকা ছাড়া আর-কোনো উপায় নেই।

 তাড়াতাড়ি এক পেয়ালা চা খেয়ে অমিত বেরিয়ে পড়ল। রাস্তা তখন নির্জন। একটা শেওলা-ধরা অতি প্রাচীন পাইন গাছের তলায় স্তরে স্তরে ঝরা পাতার সুগন্ধঘন আস্তরণের উপর পা ছড়িয়ে বসল। সিগারেট জ্বালিয়ে দুই আঙুলে অনেকক্ষণ চেপে রেখে দিলে, টান দিতে গেল ভুলে।

৫৬