পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 লাবণ্য তাড়াতাড়ি উঠে বসে বললে, ‘এমন কথা কেন জিজ্ঞাসা করছ কর্তামা?’

 ‘যদি না ভালোবাস ওকে স্পষ্ট করেই বলো-না কেন। নিষ্ঠুর তুমি, ওকে যদি না চাও তবে ওকে ধরে রেখো না।’

 লাবণ্যর বুকের ভিতরটা ফুলে ফুলে উঠল, মুখ দিয়ে কথা বেরোল না।

 ‘এইমাত্র যে দশা ওর দেখে এলুম, বুক ফেটে যায়। এমন ভিক্ষুকের মতো কার জন্যে এখানে ও পড়ে আছে! ওর মতো ছেলে যাকে চায় সে যে কত বড়ো ভাগ্যবতী তা কী এতটুও বুঝতে পার না?’

 চেষ্টা করে রুদ্ধ কণ্ঠের বাধা কাটিয়ে লাবণ্য বলে উঠল, ‘আমার ভালোবাসার কথা জিজ্ঞাসা করছ কর্তামা? আমি তো ভেবে পাই নে, আমার চেয়ে ভালোবাসতে পারে পৃথিবীতে এমন কেউ আছে। ভালোবাসায় আমি যে মরতে পারি। এতদিন যা ছিলুম সব যে আমার লুপ্ত হয়ে গেছে। এখন থেকে আমার আর-এক আরম্ভ, এ আরম্ভের শেষ নেই। আমার মধ্যে এ যে কত আশ্চর্য সে আমি কাউকে কেমন করে জানাব? আর কেউ কি এমন করে জেনেছে?’

 যোগমায়া অবাক হয়ে গেলেন। চিরদিন দেখে এসেছেন লাবণ্যর মধ্যে গভীর শান্তি, এত বড়ো দুঃসহ আবেগ কোথায় এতদিন লুকিয়ে ছিল! তাকে আস্তে আস্তে বললেন, ‘মা লাবণ্য, নিজেকে চাপা দিয়ে রেখো না। অমিত অন্ধকারে তোমাকে খুঁজে খুঁজে বেড়াচ্ছে; সম্পূর্ণ করে তার কাছে তুমি

৯৯