পাতা:শেষের পরিচয় - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় କ୍ଷୋତ୍ଵ আফিসে সামান্য যাহা অবশিষ্ট আছে তাহার পরে একটা দিনও নির্ভর করা চলেন, অথচ, এই রেণু তাহার কাছেই একদিন মানুষ হইয়াছে। কিন্তু সে কথা আজ থাকা । তাহারই চিকিৎসায় তাহারি কাছে গিয়া তাত পাতিৰে সে কি করিয়া ? যদি না থাকে ? সে জানে, যে-বাটীতে সে ছেলে পড়ায় তাহারা অত্যন্ত কৃপণ। বন্ধু-বান্ধব অনেক আছে সত্য কিন্তু সেখানে আবেদন করা তেমনি নিস্ফল । অনেক ‘বড়লোক’ গোপনে তাহারই কাছে ঋণী ; সে-ঋণ নিজে সে না ভুলিলেও তঁাহারা ভুলিয়াছেন। সহসা মনে পড়িল নতুন-মাকে । কিন্তু দীপশিখা জ্বলিয়াই স্তিমিত হইয়া আসিল,—সেখানে দাও বলিয়া দাড়ানোর কল্পনাও তাহাকে কুষ্ঠিত করিল । কারণ জিজ্ঞাসা করিলে সে বলিবেই বা কি এবং বলিবেই বা কি করিয়া ? এ পথ নয়, কিন্তু আর-একটা-পথও তাহার চোখে পড়িলনা । কিন্তু সে বলিলে তো চলিবেন, পথ তাহার চাই-ই,- তাহাকে পাইতেই হইবে । দাসী আসিয়া খাবার কথা বলিলে সে নিষেধ করিয়া জানাইল তাহার অন্যত্র নিমন্ত্রণ আছে । এমন প্রায়ই থাকে । ঝি চলিয়া গেলে সেও দ্বারে চাবি দিল। রাখাল সৌখিন লোক, বেশ-ভূষার সামান্য অপরিচ্ছন্নতাও তাহার সহ্য হয়না, কিন্তু আজ সে কথা তাহার মনেই পড়িলন, যেমন ছিল তেমনিই বাহির হইয়া গেল । নতুন-মার বাটীতে আসিয়া যখন পৌছিল তখন সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হইয়াছে। সম্মুখে খানকয়েক মোটর দাড়াইয়া, বৃহৎ অট্টালিকা বহুসংখ্যক বিদ্যুৎদীপালোকে সমুজ্জল, দ্বিতলের বড়-ঘরে বাদ্য-যন্ত্র বাধা-বাধির শব্দ উঠিয়াছে, গৃহ-স্বামিনী নিরতিশয় ব্যস্ত,-ভাগ্যবান আমন্ত্রিতগণের আদর-আপ্যায়নে ত্রুটি না ঘটো-রাখালকে দেখিয়া একমুহূৰ্ত্তে থমকিয়া দাড়াইয়া প্রশ্ন করিলেন, এতক্ষণে বুঝি আমাদের মনে পড়লো বাবা ?