পাতা:শেষের পরিচয় - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S) শেষের পরিচয় নাই। কিন্তু শুনিতে তাহার বাকি থাকিবেনা। তখন সেও হয়ত এমনি নীরবেই ক্ষমা করিবে। তাহার ”পরে কাহারে রাগ নাই, অভিমান নাই, ব্যথা দিতে এতটুকু কটাক্ষ পৰ্য্যন্ত কেহ করে নাই। দুঃখের দিনে সে যে দয়া করিয়া তাহদের খোজ লাইতে আসিয়াছে ইহাতেই সকলে কৃতজ্ঞ । ব্যস্ত হইয়া ব্ৰজবাবু স্বহস্তে দিতে আসিয়াছিলেন তাহাকে বসিবার আসন, —যেন অতিথির পরিচর্য্যায় কোথাও না ত্রুটি হয়। অর্থাৎ, পরিপূর্ণ বিচ্ছেদের আর বাকি কিছু নাই, চলিয়া আসিবার কালে সবিতা এই কথাটাই নিঃসংশয়ে জানিয়া আসিল ॥৮ রেণু জানে তাহার পিতা নিঃস্ব। সে জানে তাহার ভবিষ্যতের সকল সুখ-সৌভাগ্যের আশা নিমূল হইয়াছে। কিন্তু এই লইয়া শোক করিতে বসে নাই, দুৰ্দশাকে সে অবিচলিত ধৈৰ্য্যে স্বীকার করিয়াছে। সঙ্কল্প করিয়াছে ভালো হইয়া দরিদ্র পিতাকে সঙ্গে করিয়া সে তাহদের নিভৃত পল্লী-গৃহে ফিরিয়া যাইবোঁ,-তাহার সেবা করিয়া সেখানেই জীবন অতিবাহিত করিবে । ব্ৰজবাবু বলিয়াছিলেন রেণু জানে মা তাহার বঁাচিয়া আছে—ম তাহার অগাধ ঐশ্বৰ্য্যে সুখে আছে। স্বামীর এই কথাটা যতবার তাহার মনে পড়িল ততবারই সর্বাঙ্গ ব্যাপিয়া লজ্জায় কণ্টকিত হইয়া উঠিল। ইহা মিথ্যা নয়,-কিন্তু ইহাই কি সত্য ? মেয়েকে সে দেখে নাই, রাখালের মুখে আভাসে তাহার রূপের বিবরণ শুনিয়াছে’-শুনিয়াছে সে নাকি তাহার মায়ের মতোই দেখিতে। নিজের মুখ মনে করিয়া সে ছবি আঁকিবার চেষ্টা করিল, স্পষ্ট তেমন হইলনা, তবুও রোগ-তপ্ত তাহার আপন মুখই যেন তাহার মানস-পটে বারবার ফুটিয়া উঠিতে লাগিল । পাড়াগায়ের দুঃখ-দুৰ্দশার কত সম্ভব-অসম্ভব মূৰ্ত্তিই যে তাহার কল্পনায় আসিতে যাইতে লাগিল তাহার সংখ্যা নাই,- এবং সমস্তই যেন সেই