পাতা:শেষের পরিচয় - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

e তারক আসিয়াছে লইতে। আজ শনিবারের রাত্রিটা সে এখানে থাকিয়া কাল দুপুরের ট্ৰেনে নতুন-মাকে লইয়া যাত্ৰা করিবে। সঙ্গে যাইবে জন দুই দাসী-চাকর এবং সারদা । তাহার হরিণ-পুরের বাসাটা তারক সাধ্যমতো সুব্যবস্থিত করিয়া আসিয়াছে। পল্লীগ্রামে নগরের সকল সুবিধা পাইবার নয়, তথাপি আমন্ত্রিত অতিথিদের ক্লেশ না হয়, তঁহাদের অভ্যন্ত জীবন-যাত্রায় এখানে আসিয়া বিপৰ্য্যয় না ঘটে এ দিকে তাহার খর দৃষ্টি ছিল। আসিয়া পৰ্য্যন্ত বারে বারে সেই আলোচনাই হইতেছিল। নতুন-মা যতই বলেন, আমি গৃহস্থ-ঘরের মেয়ে বাবা, পাড়াগায়েই জন্মোচি । আমার জন্যে তোমার ভাবনা নেই। তারক ততই সন্দেহ প্ৰকাশ করিয়া বলে, বিশ্বাস করতে মন চায়ন মা, যে-কষ্ট সাধারণ দশজনের সহ্য হয় আপনারও তা সইবে । ভয় হয়, মুখে কিছুই বলবেননা, কিন্তু ভেতরে-ভেতরে শরীর ভেঙে যাবে। --ভাঙবেনা তারক ভাঙবেন । আমি ভালোই থাকবো । --তাই হোক মা । কিন্তু দেহ যদি ভাঙে আপনাকে আমি ক্ষম করবোন তা” বলে রাখচি । নতুন-মা হাসিয়া বলিলেন, তাই সই। তুমি দেখো আমি মোটা হয়ে ফিরে আসবো । তথাপি পল্লীগ্রামের কত ছোট ছোট অসুবিধার কথা তারকের মনে আসে। নানাবিধ খাদ্য-সামগ্ৰী সে যথাসাধ্য ভালোই সংগ্ৰহ করিয়া রাখিয়াছে, কিন্তু খাওয়াই ত সব নয়। গোটা দুই জোর আলো চাই, রাত্রের চলা-ফেরায় উঠানের কোথাও না লেশমাত্র ছায়া পড়িতে পারে।