পাতা:শেষের পরিচয় - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

eas শেষের পরিচয় বছর দেড়েক হইল সারদকে একটি নারীশিক্ষা প্ৰতিষ্ঠানের স্কুলে সবিতা ভৰ্ত্তি করিয়া দিয়াছেন। সেখানে সে লেখাপড়া, নানাবিধ অর্থকরী গৃহশিল্প, শিশুপালন ও শুশষ বিজ্ঞান প্রভৃতি বিভিন্ন বিভাগে কাজ শিখিবার জন্য প্ৰস্তুত হইয়াছে। এক একটি বিষয় শিখিবার নির্দিষ্ট কয়েক বৎসর বা কয়েক মাস করিয়া সময় আছে । বৰ্ত্তমানে লেখাপড়া ও দর্জিকৰ্ম্ম বিভাগে সারদার দ্বিতীয়বর্ষ চলিতেছে। বেলা নয়টার সময় স্কুলের গাড়ী আসে, ফেরে বেলা পাঁচটায়। অপরাহ্নে সবিতা তাহার খাবার লইয়া বসিয়া থাকেন। সারদা ফিরিলে দ্রুত তাড়া দিয়া তাহাকে কাপড় বদলাইয়া, হাত-মুখ ধোওয়াইয়া, নিজ হাতে খাবার পরিবেশন করিয়া। তবে তঁহার স্বস্তি । তারকের সম্বন্ধেও তাহাই । কোর্ট হইতে ফিরিবার পূর্বে তাহার বিশ্রামের ও জলযোগের ব্যবস্থা নিজহাতে করিতে না পাব্রিলে সবিতা তৃপ্তি পাননি । 录 তারক প্ৰতিবাদ করে, অনুযোগ করে, কিন্তু সবিতা কর্ণপাত করেননা । সারদা বলে, মা, আপনার সেবার ভার নিতে আপনার কাছে এলান, কিন্তু আপনিই যে শেষে আমার সেবা হাতে তুলে নিলেন। আমি সত্যিই এ সইতে পারিনে। আপনার ঘাড়ে পরিশ্রমের ভার চাপিয়ে স্কুলে যেতে আমার বাধে । সবিতা হাসিয়া বলেন, মা, এই কাজেই আমার বেশি তৃপ্তি । স্কুল তোমার কোনও মতেই ছাড়া হবেনা, আমি বেঁচে থাকতে ! জীবনে তোমার অবলম্বন তো চাই । শিক্ষা না পেলে আত্ম-নির্ভরতার শক্তি পাবে কোথা থেকে ? একদিন হয়তো তোমাকে একলা বেঁচে থাকতে হবে এই পৃথিবীতে। নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাড়াতে না শিখলে, দুঃখের অবধি থাকেন। মেয়েদের, এতো তোমার অজানা নেই। সারদা ।