পাতা:শেষের পরিচয় - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় G8 নিচের তলায় তিন-চারটি পরিবার ভাড়া দিয়া বাস করে । প্ৰত্যেকের দু’খনি করিয়া ঘর, বারান্দার একটা অংশ তক্তার বেড়া দিয়া এক সার রান্নাঘরের সৃষ্টি হইয়াছে, তাহাতে ইহঁহাদের রন্ধন ও খাবার কাজ চলে। জলের কল, পায়খানা প্ৰভৃতি সাধারণের অধিকারে । ভাড়াটেরা সকলেই দরিদ্র, ভদ্র কেরাণী, ভাড়ার হার যথেষ্ট কম বলিয়া মাসের শেষে বাসা বদল করার রীতি এ বাটীতে নাই,--সকলেই প্ৰায় স্থায়ীভাবে বাস করিয়া আছেন। শুধু জীবন চক্ৰবৰ্ত্ত ছিল নূতন, এ বাড়ীতে বোধকরি বছর দুইয়ের বেশি নয়। তাহারই স্ত্রী আফিং খাইয়া বিভ্ৰাট বাধাইয়াছে। বউটর নিজের ছেলে-পুলে ছিলনা। বলিয়া সমস্ত ভাড়াটেদের ছেলে-মেয়ের ভার ছিল তাহার পরে। স্নান করানো, ঘুম পাড়ানো, ছেড়া জাম-কাপড় সেলাই করা, —এ সব সেই কারিত। গৃহিণীদের ‘হাত-জোড়া’ থাকিলেই ডাক পড়িত জীবন দের বউকে,- কারণ, সে ছিল ঝাড়-হাত-পা’র মানুষ, অতএব, তাহার। আবার কাজ কিসের ? এত অল্প বয়সে কুড়োমি ভালো নয়। বউটর সম্বন্ধে এই ছিল সকল ভাড়াটের সর্ববাদি-সম্মত অভিমত । সে যাই হোক, শান্ত ও নিঃশব্দ প্ৰকৃতির বলিয়া সবাই তাহাকে ভালোবাসিত, সবাই স্নেহ করিত। কিন্তু স্বামীর যে তাহার। পাচ-ছয় মাস ধরিয়া কাজ নাই এবং সেও যে আজ সাত-আট দিন নিরুদ্দেশ্য এ খবর ইহাদের কানে পৌছিল শুধু আজি, -সে যখন মরিতে বসিয়াছে। কিন্তু তবুও কাহারও বিশ্বাস হইতে চাহেনা,-জীবন দের বউ যে আফিং খাইতে পারে এ যেন সকলের স্বপ্নের অগোচর । রাখালকে লইয়া নতুন-মা যখন তাহার ঘরে ঢুকিলেন তখন সেখানে কেহ ছিলনা। বোধকরি পুলিশ হাঙ্গামার ভয়ে সবাই একটু খানি আড়ালে গা-ঢাকা দিয়াছিল। ঘরখানি যেন দৈন্তের প্রতিমূৰ্ত্তি ।