পাতা:শেষের পরিচয় - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(& শেষের পরিচয় একবার মনে মনে আবৃত্তি করিল। বয়স-উনিশ-কুড়ি, সাজ-সজ্জাআভরণহীন দরিদ্র ভদ্র গৃহস্থের মেয়ে, অনশন ও অৰ্দ্ধাশনে পাণ্ডুর মুখের পরে মৃত্যুর ছায়া পড়িয়াছে,-কিন্তু রাখালের মুগ্ধ চক্ষে মনে হইল মরণ যেন এই মেয়েটিকে একেবারে রূপের পারে পৌছাইয়া দিয়াছে। কিন্তু ইহা দেহের অক্ষুঃ সুষমায় না। অন্তরের নীরব মহিমায় রাখাল নিঃসংশয়ে বুঝিতে পারিলিনা । হাসপাতালে সো তার যথাসাধ্য,--সাধ্যেরাও অধিক কাধিবে সংকল্প করিল, কিন্তু এই দুঃখ-সাধ্য প্রচেষ্টার বিফলতার চিন্তায় করুণায় তাহার চোখে জল আসিয়া পড়িল । হঠাৎ, সঙ্গিনী স্ত্রীলোকটির কাধের উপর হইতে মাথাটা টলিয়া পড়িতেছিল, রাখাল শশব্যাস্তে হাত বাড়াইয়াই তৎক্ষণাৎ নিজেকে সামলাইয়া ফেলিল । এই অপরিচিতার তুলনায় তাহার কত বড়-ঘরের মেয়েদেরই না এখন মনে পড়িতে লাগিল। সেখানে রূপের লোলুপতায় কি উগ্ৰ অনাবৃত ক্ষুধা । দীনতার আচ্ছাদনে কত বিচিত্র আয়োজন, কত মহাৰ্ঘ প্ৰসাধন, --কি তার অপব্যয় ! পরস্পরের ঈর্ষা-কাতর। নেপথ্য-আলোচনায় কি জ্বালাই না সে বারবার চোখে দেখিয়াছে । আর, সমাজের আর-এক-প্ৰান্তে এই নিরাভরণ বধূট ? এই কুষ্ঠিত-শ্ৰী, এই অদৃষ্ট-পূর্ব মাধুৰ্য্য ইহাও কি অহঙ্কত আত্মম্ভরিতায় তাহারা উপহাসে কলুষিত করিবে ? সে ভাবিতে লাগিল কি-জানি দায়গ্ৰস্ত কোন ভিখারী মাতা-পিতার কন্যা এ, কোন দুর্ভাগা কাপুরুষের হাতে ইহাকে তাহারা বিসর্জন দিয়াছিল । কি-জানি, কতদিনের অনাহারে এই নিৰ্বাক মেয়েটি আজ ধৈৰ্য হারাইয়াছে, তথাপি, যে সংসার তাহাকে কিছুই দেয় নাই ভিক্ষা-পাত্ৰ হাতে তাহাকে দুঃখ জানাইতে চাহে নাই। যতদিন পারিয়াছে মুখ বুজিয়া তাহারি কাজ, তাহারি সেবা করিয়াছে। হয়ত,