পাতা:শেষের পরিচয় - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(s শেষের পরিচয় রাখাল হাসিয়া বলিল, করার কথাই তো । আমি বয়সে কত বড় । তাহলে, যাবার প্রস্তাবটা আমাকে এই ভাবে করতে হয়,-সারদা, এবার তুমি বাড়ী চলে ? মেয়েটি জিজ্ঞাসা করিল, আমি আপনাকে কি বলে ডাকবো ? নাম তো করা চলেন । রাখাল বলিল, না চললেও উপায় আছে। আমার পৈতৃক নাম রাখাল,-রাখাল-রাজ। তাই, ছেলেবেলায় নতুন-মা ডাকতেন রাজু বলে। এর সঙ্গে একটা ‘বাবু জুড়ে দিয়ে তো অনায়াসে ডাকা চলে সারদা । মেয়েটি মাথা নাড়িয়া বলিল, ও এক-ই কথা । আর, গুরুজনের স্বা” বলে ডাকেন। তাই হয় নাম। আমাদের দেশে ব্ৰাহ্মণকে বলে দেবৃতা। আমিও আপনাকে দেবতা বলে ডাকবো । -ইঃ ! বলে কি ? কিন্তু ব্ৰাহ্মণত্ব আমার যে কণা-কড়ির নেই। সারদা । --নেই থাক। কিন্তু দেবতাত্বি ষোল-আনার আছে। আর, ব্ৰাহ্মণের ভাল-মন্দর আমরা বিচার করিনে। করতেও নেই। " জবাব শুনিয়া, বিশেষ করিয়া বলার ধরণটায় রাখাল মনে মনে একটু বিস্মিত হইল । সারদা পল্লীগ্রামের কোন-এক দরিদ্র ব্ৰাহ্মণের মেয়ে, সুতরাং যতটা অশিক্ষিতা ও অমাজ্জিত বলিয়া সে স্থির করিয়া রাখিয়াছিল ঠিক ততটা এখন মনে করিতে পারিলন । আর একটা বিষয় তাহার কানে বাজিল। পল্লীগ্রামে শূদ্ররাই সাধারণতঃ ব্ৰাহ্মণকে দেবর্তী বলিয়া সম্বোধন করে, তাহার নিজের গ্রামেও ইহার প্রচলন আছে, কিন্তু ব্ৰাহ্মণ-কন্যার মুখে এ যেন তাহার কেমন-কেমন ঠেকিল। তবে, এ ক্ষেত্রে বিশেষ-কোন অর্থ যদি মেয়েটির মনে থাকে ত সে স্বতন্ত্র কথা ।